বিনোদন

সালমান-মৌসুমীকে পাওয়ার ২৬ বছর

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত এই ছবিটি বাংলা ছবির ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে আছে। এই ছবি দিয়েই ঢাকাই ছবিতে যাত্রা করেছিলেন অমর নায়ক সালমান ও প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী মৌসুমী।

Advertisement

পরবর্তীতে জানা গেছে, এ ছবির জন্য খোঁজা হচ্ছিলো দুজন নতুন মুখ, যারা এর আগে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। সেই সূত্রে জনপ্রিয় মডেল নোবেলসহ আরও অনেককেই দেয়া হয়েছিল এই ছবির নায়ক-নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব।

বিপাশা হায়াত-তৌকীর আহমেদের কাছেও গিয়েছিল এই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব। তবে নিজেদের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে দেখতে চান না বলে দুজনই এ ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে মাছরাঙা টেলিভিশনে বিশেষ ঈদ অনুষ্ঠান ‘কেমিস্ট্রি’তে চমকপ্রদ তথ্যটি জানিয়েছেন এই তারকা দম্পতি।

তবে শেষ পর্যন্ত সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালক বেছে নেন অমর নায়ক সালমান শাহ ও মৌসুমীকেই। ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়েছিল এই ছবিটি। সেই ছবিটির আজ মুক্তির ২৬ বছর পূর্ণ হলো।

Advertisement

ছবিটিতে সালমান-মৌসুমী ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, রাজিব, আহমেদ শরীফ, ডন, টেলি সামাদ, সাইফুদ্দিনসহ অনেক জনপ্রিয় তারকারা।

ঢাকাই ছবির ইতিহাসে অনন্য এক নাম হয়ে আছে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। ছবিটি দিয়ে একদিকে যেমন পরিচালক হিসেবে সোহানুর রহমান সোহানের উত্থান অন্যদিকে বাংলাদেশের সিনেমা পেয়েছিলো সালমান-মৌসুমী নামের উজ্জ্বল দুই নক্ষত্রকে।

পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বেশ সংখ্যক ছবি নির্মাণ করেছেন। তবে তিনি এই একটি ছবির জন্য দর্শকদের কাছে স্মরণীয় থাকবেন।

এ ছবির গল্পই মূল নায়ক। রোমান্টিক প্রেমের বিয়োগাত্মক গল্পের মূল শক্তি ছিলো এর সংলাপ। এখনো এই ছবি দেখে হাসেন দর্শক, কাঁদেন ও প্রেমে মজেন।

Advertisement

এই ছবির পর সালামান-মৌসুমী জুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। তারা আরও বেশ কিছু বাম্পারহিট ছবিতে অভিনয় করেন। পাশাপাশি একক ক্যারিয়ারে দুজনই পেয়েছেন আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা। মাত্র তিন বছরেই থেমে যাওয়া সালমান শাহ ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। মৃত্যু তাকে চোখের দেখায় আড়ালে নিয়ে গেলেও তিনি এখনো এ দেশীয় সিনেমার পোস্টার বয় হয়ে আছেন, এমনটাই মনে করেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান।

অন্যদিকে নায়িকা মৌসুমীও দীর্ঘ দিনের ক্যারিয়ারে পেয়েছে অসাধারন সাফল্য। তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলার ছবির দর্শকের কাছে প্রিয়দর্শিনী। এখনো অভিনয় করে যাচ্ছেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে।

সালমান ও মৌসুমীর বাইরে এই ছবিতেই খল হিসেবে অভিষেক ঘটে ডনের। এর বাইরে খান আতা ও নীলুফার ইয়াসমিনের পুত্র আগুনও চলচ্চিত্রের গায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এই ছবি দিয়ে। তার গাওয়া ‘বাবা বলে ছেলে নাম করবে’ গানটি সালমান শাহের মুখে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। সেইসঙ্গে কালজয়ী হয়েছে তার গাওয়া ‘ও আমার বন্ধু গো’ গানটিও। পরবর্তীতে অসংখ্য চলচ্চিত্রে শ্রুতিমধুর গানের গায়ক হয়েছেন আগুন। আর সালমানের বেশ কিছু জনপ্রিয় গানেরও গায়ক তিনি। দুজনের মধ্যে ছিলো দারুণ এক সম্পর্কও।

অন্যদিকে প্রখ্যাত খল অভিনেতা রাজিব এই ছবি দিয়ে বাবা চরিত্রে ইতিবাচক ইমেজ নিয়ে দর্শকের মনে দাগ কাটেন। পরবর্তীতে এই ধারার অনেক ছবি করেন তিনি।

ছবিটি বলিউডের ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’ ছবির অফিসিয়াল সত্ব কিনে এনে নির্মাণ করেছিলো বিখ্যাত প্রযোজক সংস্থা আনন্দমেলা সিনেমা। এই সিনেমার পর আরও বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অনেক বছর পেরিয়ে গেছে সেই ছবির মুক্তি হলো। আজও এতটুকু কমেনি এর আবেদন। এখনো টিভিতে ছবিটি প্রচারিত হলে দর্শক বসে যান মুগ্ধতার অপেক্ষায়। এখনো মানুষের মুখে ফিরে ফিরে বাজে সেই বিখ্যাত ছবির নন্দিত সব গান।

তারমধ্যে ‘ও আমার বন্ধু গো, চির সাথী পথ চলার/ তোমারই জন্য গড়েছি আমি মঞ্জিল ভালোবাসার- এই গানটি রিমেক হয়েছে বহুবার বহু শিল্পীর কণ্ঠে। নানা অনুষ্ঠানে শোনা যায় এখনো ‘বাবা বলে ছেলে নাম করবে’ গানটি।

এই ছবির সুরকার ছিলেন নন্দিত সুরস্রষ্টা আলম খান। ছবির গানগুলো লিখেছেন মনিরুজ্জামান মনির। গানে আগুনের পাশাপাশি কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লাও কণ্ঠ দিয়েছেন।

সালমান-মৌসুমী জুটির ভক্ত ও ঢাকাই সিনেমার দর্শকরা ভুলে যাননি আজকের দিনটির কথা। তারা অনেকেই ফেসবুকে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি নিয়ে লিখছেন নানা স্মৃতিচারণ ও গল্প।

ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করা এমন একটি চলচ্চিত্র আবার কবে আসবে সেটা হয়তো অজানা। তবে এমন ছবি বারবার প্রয়োজন সিনেমার এই সংকট দিনে এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।

এলএ/জেআইএম