ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ (চাকরিচ্যুত মেজর) ছয়জনের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়েছে তা বিচারের জন্য আদালত বদলের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম।
Advertisement
সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারী চার্জশিটটি ‘দেখিলাম’ বলে স্বাক্ষর করে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বদলি করেন।
শাহবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে এই চার্জশিটটি দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩৪ জনকে।
Advertisement
মেজর জিয়া ছাড়া অপর আসামিরা হলেন- মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, মো. মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদী, মো. আরাফাত রহমান, শফিউর রহমান ফারাবি। জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক রয়েছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগআসামি মোজাম্মেল হুসাইন, আকরাম হোসেন, হাসান ও আবু সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৯২/২ নম্বর বাসাটি ভাড়া নিয়ে অভিজিত রায়কে বিভিন্ন স্থানে অনুসরণসহ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন। আসামি মোজাম্মেল রেকি টিমের নেতৃত্ব প্রদান করাসহ অপারেশন শাখার মকুল রানাকে অনুসরণসহ এ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক সহযোগিতা এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে আসামি আবু বকর, আকরাম ও হাসান ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার অভিপ্রায়ে অনুসরণ এবং রেকি করাসহ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন।
আসামি আরাফাত রহমান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তু আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশন শাখার সদস্য সাংগঠনিকভাবে তাদের দায়িত্ব ছিল টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করা। আর অভিজিতকে তারা চারজনই চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কোপায়।
Advertisement
অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও কুপিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধা আঙুল কেটে ফেলে এবং মারাত্মক আহত করে।অপারেশন শাখার চারজন আসামি যাতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে তার জন্য তাদের চারপাশে আসামি মেজর জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, মোজাম্মেল, আবু সিদ্দিক, আকরাম ও হাসান অভিজিৎ রায়কে কোপানোর সময় কর্ডন করে রাখে।
যে কারণে অব্যাহতির আবেদনঅব্যাহতি আবেদনের আসামিরা হলেন- সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আব্দুর সবুর ওরফে রাজু সাদ, মাইনুল হাসান শামীম, মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি, আবুল বাশার, মকুল রানা, সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তু।
আসামি সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আব্দুর সবুর ওরফে রাজু সাদ ও মাইনুল হাসান শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অব্যাহতি আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। মকুল রানা খিলগাঁও এলাকায় বন্ধুকযুদ্ধে মারা যায়। অপর পাঁচ আসামি সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি আবেদন করেন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
অভিজিৎ হত্যকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পর আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলে খবর দেয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
তবে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা নেই।
জেএ/এনএফ/আরআইপি