দেশজুড়ে

বিএনপি নেতার এ কেমন সংবর্ধনা?

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে সংবর্ধনা নেয়ার সময় বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম সবার সামনে একজন বিধবা নারীকে জড়িয়ে ধরেছেন। একই সঙ্গে ওই নারীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেছেন তিনি।

Advertisement

গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মো. আবুল কালাম। এরপর ২২ মার্চ স্থানীয় নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মেরিনচর পাড়ায় সংবর্ধনা নিতে যান তিনি। ওই পাড়ায় মূলত ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের বসবাস। সংবর্ধনা নিতে গিয়ে এ আপত্তিকর ঘটনা ঘটান আবুল কালাম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ঘটনার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ম্রো নৃগোষ্ঠীর এক বিধবা নারীকে জনসম্মুখে জড়িয়ে ধরে ধরেছেন আবুল কালাম। ওই নারীর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট হয়, এতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন এবং জোর করে চেয়ারম্যানের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যান তাকে জোরপূর্বক ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

ফেসবুকে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই চেয়ারম্যানের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন বিধবা নারীকে এভাবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হেনস্তা করার দায়ে চেয়ারম্যানের বিচার চেয়েছেন অনেকে। ওই নারীর ভাই স্থানীয় এমএনপি কমান্ডারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে চেয়ারম্যান আবুল কালাম ওই পাড়ায় সংবর্ধনা নিতে যান বলে জানা যায়।

Advertisement

ছবিগুলো শেয়ার করে মোহাম্মদ রকি নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মো. আবুল কালাম, একজন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় সম্প্রতি তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ম্রো আদিবাসীদের পাড়ায় যান সংবর্ধনা নেয়ার জন্য। বান্দরবানের ম্রো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকজন সচরাচর একটু সরল প্রকৃতির। সাদামনের মানুষও বটে, সরল মনে ম্রো আদিবাসীরা খুব সহজে বিশ্বাস করেন। তারা হয়তো এটা জানেন না যে, আবুল কালাম (নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান) ম্রো-দের মতো একজন সরল প্রকৃতির মানুষ নন।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি কখনো এভাবে একজন নারীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না ওই নারীর অনুমতি ছাড়া। কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি ছাড়া কখনো একজন নারীকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ শ্লীলতাহানি ও নারী সমাজকে অবমূল্যায়ন করা।’

নিপুন ত্রিপুরা নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ভোট কারচুপি করে বিজয়ী হওয়া আলীকদমের এই চেয়ারম্যানের নাম আবদুল কালাম। সংবর্ধনা নিতে গিয়ে সহজ সরল ম্রো মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছেন, তার আশপাশের লোকজন হাততালি দিচ্ছেন।

আব্দুল্লাহ আল মনছুর নামে একজন ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আবুল কালাম, বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ম্রো আদিবাসীদের পাড়ায় যান সংবর্ধনা নেয়ার জন্য। বান্দরবানের ম্রো আদিবাসীর লোকজন একটু সরল প্রকৃতির। সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন আবুল কালাম। একজন জনপ্রতিনিধি কখনো এভাবে একজন নারীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না। এটি শ্লীলতাহানি।’

Advertisement

এদিকে ফেসবুকে ছবি ভাইরালের বিষয়ে জানতে চাইলে আলীকদম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, আমাকে গত পরশুদিন সংবর্ধনা দিয়েছে। ওই এলাকার কেন্দ্রে আমি প্রথম হয়েছি। আমি শুনেছি ওই মেয়ে নির্বাচনের সময় আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। ওইদিন তিন চারজন কারবারীর সামনে আমাকে ফুল দিতে এসে ওই মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমিও আমার মতো সান্ত্বনা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, মেয়ের অভিভাবকরা এটা নিয়ে যদি অভিযোগ করে সেটা নিয়ে লেখেন। আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার জন্মই মারমা পাড়ায়। আর ওই মেয়ে আমার মেয়ের বয়সী। আদিবাসি সেক্টরে আমার কোনো খারাপ রেকর্ড নেই। আমি একবারের ইউপি সদস্য এবং তিনবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। আমার প্রতিপক্ষ যারা তারাই এটা নিয়ে কাদা ছুড়ছে।

সৈকত দাস/এএম/পিআর