রক্তরোগসহ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সঙ্গে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
Advertisement
রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের ডা. মিল্টন হলে অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
সমঝোতা স্মারকে সই করেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান এবং টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের পরিচালক (একাডেমিকস) প্রফেসর এস. বানাভালি ও প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক সুমীত গুজরাল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ। এ সময় হেমাটোলজি বিভাগের কার্যক্রম তুলে ধরেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।
Advertisement
গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. গাজী শামীম হাসান, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, প্রক্টর অধ্যাপক সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, নবনিযুক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ভারত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতেও নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। আজকের এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরও ভারতের সহায়তার অংশ বলেই আমি মনে করি। এর ফলে দেশের ক্যান্সার রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট অত্যন্ত জরুরি। এই সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট চালু করা সম্ভব হবে। এতে করে দেশের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা সহজলভ্যে ও সাশ্রয়ীমূল্যে পাবেন এবং অনেক রোগী অকালে মৃত্যুবরণ থেকে রক্ষা পাবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে গত ২০১২ সালের তুলনায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে রক্তরোগের ক্যান্সার ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ হাজার ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। এসব রোগীর অধিকাংশেরই বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্যয়বহুল এই চিকিৎসাটি দেশে সহজলভ্য এবং নিয়মিতভাবে চালু না থাকার কারণে অনেক রোগীই অকালে মৃত্যুবরণ করছে।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার ফলে অটোলোগাস ও অ্যালোজেনিক পদ্ধতিসহ বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (বিমটি) পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হবে। বিএমটির অটোলোগাস চিকিৎসায় দেশের বাইরে প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং অ্যালোজেনিক চিকিৎসায় ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা ব্যয় হয়।
এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী তিন মাস পর নিয়মিতভাবে অটোলোগাস এবং ছয় মাস পর অ্যালোজেনিক পদ্ধতির বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট চালু করা হবে। এখানে চিকিৎসাব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।
এছাড়া উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও চিকিৎসার স্বার্থে রোগীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় প্রযিুক্ত হস্তান্তরের নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হবে। উভয় প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্ট ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক বা বিশেষজ্ঞবৃন্দ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারবেন।
এমইউ/বিএ/পিআর