সাহিত্য

বাংলা কবিতার অভিযাত্রায় অজানা অভিঘাত নয়া অভিজ্ঞতা

লেখক মারুফুল ইসলামের বেশ কিছু বই আমি পড়েছি। তাঁর লেখায় নতুনত্বের কারণেই তাঁর বইয়ের প্রতি আমার বরাবরের আগ্রহ। হঠাৎ করেই তাঁর ‘নতুন করে পাব বলে’বইটি আমার হাতে এলো।

Advertisement

পাঠক বইটি হাতে নিয়েই হয়তো বলবেন এটা একটি কবিতার বই। কিন্তু বইটির ভেতরে প্রবেশ করলেই বুঝবেন এটি অন্যান্য কবিতার বইয়ের চেয়ে একটু ভিন্নধর্মী। এ বইয়ে সন্নিবেশিত কবিতার কোন নাম নেই। বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কবিতাগুলো যেন একটি ফুলের তোড়ার মত সাজানো। তাই বইয়ের কবিতাগুলো পাঠককে পড়তে হয় এক নাগাড়ে।

বইটি পড়ার সময় মনে হয় বাংলা কবিতার অভিযাত্রায় এ এক অজানা অভিঘাত, নয়া অভিজ্ঞতা। বইয়ের কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষের ভেতর বাহিরের চিন্তাভাবনা, বোধ,অনুভূতি, প্রেম বিরহ, প্রতিদিনের ছবি, মানুষে মানুষে সর্ম্পক কবি ফুটিয়ে তুলেছেন সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। কবিতায় এনেছেন যেন এক নতুন পথ। চলুন ঘুরে আসি কবিতার বইয়ের পাতা থেকে-‘জুরিখে আমার পাঁচ বছরের ছোট মেয়ে মূর্ছনার হাত ধরে রেখে রাস্তা পার হচ্ছিলাম রিয়া আর আমি...বাইসাইকেল থামিয়ে এক পৌঢ় আমাদের পার হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে কোন দেশ থেকে বেড়াতে এসেছি জেনে আচমকা গেয়ে উঠলেনবাংলাদেশ..বাংলাদেশবাংলা বাংলাবিশ্ব দেখুক বাংলাবিশ্ব জানুক বাংলাবিশ্ব শুনুক বাংলাআমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি ” ।‘বুলেটে বেয়নেটে ঠেকাতে চেয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামবুটের তলায় আর ট্যাংকের চাকায় নিশ্চিহ্নে পিষে ফেলতে চেয়েছিল বাঙ্গালি জাতিসত্তা আর মানবতা কিন্তু মাথার ওপরে অন্তরিক্ষে অদম্য তর্জনি উদ্যত করে ধরিত্রীর বিপুল বিস্তারে পর্বতপ্রমাণ দাঁড়িয়েছিলেনসময়ের অবিসংবাদিত সেই সূর্যসন্তানআর সাড়ে সাত কোটি অসম্প্রদায়িক বুকের পাঁজরে আমরা রচনা করেছিছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে জোড়া এই বিজয় দূর্গেসে রাতে পরাজয় মানেনি এই দুর্দম দুর্জয়বাংলার মাটি,বাংলার জল ” ।‘প্রয়োজনের অতীত কোন সর্ম্পক নেইএই কথা বলে কেউ দিগন্তে হারায়পা বাড়ায় কেউ কেউ সর্ম্পকহীনতায় অশ্রভেজা পৃষ্ঠায়হরফে হরফে লিখেছি নিজের রক্তাক্ত নাম তবু নামহীন সংজ্ঞায়আমার অন্ধপ্রদীপ শূন্য-পানে চেয়ে আছে ’ । ‘এদেশের নামে প্রেম ,রঙ্গে প্রেম ,প্রাণে প্রেম,মনে প্রেমমানচিত্রে প্রেমপূর্ণ ছবিকাহ্নপা চন্ডিদাস মধুসূদন লালন হাছনরবীন্দ্রনাথ নজরুল জীবনানন্দ জসীম করিম এ মাটির প্রেমমগ্ন কবিঘুম ভেঙ্গে শুনি সেই চির প্রেমময় ডাক এসো এসো এসো হে বৈশাখ’ ।‘ আমার গল্পে ও কবিতায় কত ফাঁক রয়ে গেলশুধু তুমি আজও ছুঁয়ে দাওনি বলেসম থেকে শুরু করেও আবার সমে ফিরে আসতে পারছিনাআমার সরোদে তোমার মাত্র একটা টোকার অপেক্ষায়উৎকণ্ঠিত তৃণভূমি হাত বাড়ায়আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই ’ ।‘গ্লোবাল ভিলেজে হয়তো অনেক কিছুই আছেহায় আমাদের সেই ছোট্ট গ্রামখানি নেই শুধুজলের ওপারেঘাটে বসে আছি আনমনা ’ ।‘সব আছে হাতে,কিন্তু কিছুই নাগালে নাকেন যামিনী না যেতে জাগালে না ’ ।‘তোমার চোখের মুছে যাওয়া কাজল জল ছবি হয়ে আছেপাড়ার ছেলেরা দেয়ালে দেয়ালে সেঁটেছে পোস্টার পরবর্তী উৎসবেরএসবের মানে খুঁজে খুঁজে তোমার শরীরে ডুব দিয়ে তুলে আনিঅবিশ্বাসের বিস্ময়তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে ’ ।‘আমিষেই যদি এত স্বাদ এত পরিতৃপ্তিতবে কেন হব আমি শরীরবিবাগীআমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী ’।

উপরের কবিতার লাইনগুলো পড়লেই বুঝবেন কবি বাংলাদেশ কে কতটা বুকের মাঝে ধারণ করেন । আসলে দেশ ছাড়া একজন কবির অস্তিত্ব থাকে কি আদৌ? কবি তো দেশকেই প্রতিনিধিত্ব করেন, নাকি? তাই কবি মারুফুল ইসলাম তাঁর বুকের ভেতরে দেশের প্রতি হৃদয় নিঙড়ানো ভালবাসাকে উগড়ে দিয়েছেন কবিতায়। প্রতিটি কবিতা শেষ করেছেন তিনি কবি গুরুর গানের লাইন দিয়ে। যা কবিতাকে দিয়েছে নতুনত্ব। পাঠক এ অভিনবত্বে পাবেন কবিতা পাঠ করার নতুন সুখ।

Advertisement

ভালবাসার কবিতায় কবি দেখিয়েছেন প্রেমের সঠিক গন্তব্য। নতুন ধাঁচের এ কবিতার বইটি পাঠকের নিঃসন্দেহে ভাল লাগবে। পাঠকের মাথায় গেঁথে থাকবে কবিতাগুলো।

সব যদি রিভিউতে আমিই বলে দিলাম তাহলে পাঠকের বই পাঠে সুখ কিসে? কবিতাপ্রেমিরা বইটি খুঁজে পাবেন অন্যপ্রকাশে। বইটি একটি চমৎকার মলাটে বন্দী যার প্রচ্ছদ শিল্পী আশুতোষ দেবনাথ। বইটির মূল্য ২৮০ টাকা।

লেখককে কবিতা পাঠের সুখ দেবার জন্য ধন্যবাদ। বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।

এইচআর/আরআইপি

Advertisement