অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনের জেরে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় প্রবেশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, প্রচ্ছায়া লিমিটেডের তিন কর্মচারীকে আইনের অপব্যবহার করে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশে আল জাজিরা ব্লক করে দিয়েছে সরকার।
Advertisement
রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এখন আর তাদের (আল জাজিরা) ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না (অবশ্য প্রতিবেদন লেখার সময় সাইটটিতে ঢোকা গেছে)। এর মাধ্যমে সরকার আবারও প্রমাণ করল সত্যকে গলা টিপে ধরে রাখতে চায় তারা। বাকশাল পুনপ্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা গণমাধ্যমকে হত্যা করছে। শুধু সত্য প্রকাশের কারণে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, পিস টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। আমার দেশসহ বহু প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, স্বৈরাচার দীর্ঘায়িত হলে নাৎসিবাদের উত্তরণ ঘটে। এ সরকারও নাৎসিবাদের উপাসক।
Advertisement
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরাই যদি নিজেদের স্বার্থের কারণে মানুষকে অদৃশ্য করে তাহলে মনুষ্যত্বহীনতার এই ভয়ংকর মূর্তি দেখে সাধারণ মানুষ কি বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা খুঁজে পাবে? ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই যদি সহজাত বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে গুম-খুনের সওদাগরিতে মেতে থাকে তাহলে মানবাধিকারের আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না-যা সভ্য সমাজে অনভিপ্রেত।’
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন, মিডনাইট নির্বাচন সাফল্যে আত্মহারা হওয়ার জন্যই শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতোই ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মাথায় আঁধার নেমেছে। এজন্যই তারা গুম-খুনের খেলায় বেপরোয়া ভাব দেখাচ্ছে।’
বর্তমান অবৈধ সরকার গত এক দশকের বেশি সময় ধরে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শেখ হাসিনার চোখে চিরকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন। ক্ষমতার পৌষ মাস যাতে কোনোদিনই শেষ না হয়, সেই নীতি অবলম্বন করেই দেশ চালাচ্ছেন তিনি। সেজন্য নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দল ও মতকে দমন করতে এমন কোনো বর্বর ও নির্দয় পন্থা নেই যা করছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংগঠন প্রকাশ্যে কিংবা তাদের গোপন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই গুম-খুন করা হচ্ছে। এই গুম-খুনের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণসহ বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নিজেদের ব্যবসায়িক কারণেও গুম করা হচ্ছে মানুষকে। কোনো মানুষেরই জীবনের নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বেরুলে তিনি আবার ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ সরকারের গোপন সংস্থার লোকজন ওৎ পেতে আছে। খবরের কাগজ খুললেই গুম। ক্রসফায়ার বা বেওয়ারিশ লাশের খবর সেন্সরশিপের পরেও প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আসছে। আর এসব খবরে সারাজাতি আতঙ্কিত ও স্তম্ভিত।’
Advertisement
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি ও সরকারবিরোধী অসংখ্য নেতা-কর্মীকে এখনো গুম করে রাখা হয়েছে। দেশটাকে এখন শেখ হাসিনা “গুমরাজ্য” বানিয়েছেন। গুমঘর থেকে কেউ কেউ সৌভাগ্যক্রমে ফিরে আসলেও অনেকের স্ত্রী-সন্তান-মা-বাবা-স্বজনরা দিনরাত চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন হারিয়ে যাওয়া তাদের প্রিয়জনদের জন্য। তারা কার কাছে বিচার চাইবে? কার কাছে যাবে?’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশ পচাত্তরে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার তার পিতা-মাতা-ভাইদের জন্য কাঁদেন। তখন তার কি একবারও মনে হয় না তার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম-খুন হওয়া পরিবারের কান্নার কথা? এই গুম-খুন বন্ধ করুন।’
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘সরকার নিজে গুম-খুনের নির্দেশ দিয়ে দানবরূপে জনগণের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। দেশ বর্তমান ও অনাগত দিনের দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা, হতাশায় ভরে গেছে। সরকার বেআইনি পথে হাঁটছে বলেই এই শ্বাসরোধী পরিবেশ। কারণ বিরোধী দল ও মতের প্রতি সরকার ও সরকারপ্রধানের ক্ষোভ-ঘৃণা ও ধ্বংস করার মানসিকতার জন্যই এখন ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অদৃশ্য করা, আটক করে কাস্টডিতে হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা, পায়ে-হাতে গুলি করে পঙ্গু করার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তাতে মানুষ এখন প্রাণ খুলে হাসতে বা কাঁদতেও ভুলে গেছে।’
কেএইচ/এসআর/পিআর