জাতীয়

অপহরণে ব্যবহৃত হচ্ছে রুট পারমিট-বৈধ কাগজবিহীন বাস!

যাত্রীদের বাসে উঠিয়ে নির্জন স্থানে নামিয়ে শুধু নারী যাত্রী কিংবা অপরিচিত যাত্রীদের অপহরণ করার কৌশল নিয়েছে একটি চক্র। অপহরণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রুট পারমিটবিহীন ও বৈধ কাগজপত্রবিহীন বাস। আর এই অপহরণে জড়িত চালক কিংবা হেলপারেরও নেই কোনো লাইসেন্স কিংবা প্রশিক্ষণ। শুধুমাত্র অপহরণের উদ্দেশ্যেই অবৈধ গণপরিবহনকে ব্যবহার করছেন তারা।

Advertisement

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে বাসযোগে নারী অপহরণ ও শ্লীলতাহানির চেষ্টাকালে র‌্যাব-১ এর সদস্যদের কাছে হাতেনাতে তিন অপহরণকারীকে আটক ও নারী ভিকটিমকে উদ্ধারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

তিনি বলেন, গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি নির্জন জায়গায় অপহরণের চেষ্টাকালে ওই তিনজনকে আটক করে।

Advertisement

আটককৃতরা হলেন মো. খলিল মিয়া (৩৩), বাসের সুপারভাইজার মেহেদী হাসান বাবু (২২) ও হেলপার রাকিব হোসেন (১৯)। এ সময় অপহৃত নারী ভিকটিমকে উদ্ধার ও অপহরণে ব্যবহৃত ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ নামক একটি বাসকে জব্দ করা হয়।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত মাসের আগে ওই নারী ঢাকায় আসেন। ঘটনার দিন ওই নারী বাইপাইল থেকে নবীনগর যাওয়ার উদ্দেশে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিরেন। এমন সময় ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ নামক বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর-মহাখালী রুটের একটি বাস বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে তিনি বাস থামান। এ সময় হেলপার তাকে গন্তব্য জিজ্ঞাসা করলে নবীনগর যাওয়ার কথা জানান। গাড়ির হেলপার তাকে নবীনগর নামিয়ে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। ঢাকায় নতুন আসায় এবং রাস্তাঘাট চেনা না থাকায় ভিকটিম তার কথামতো বাসে উঠে পড়েন।

ওই নারী তার ভাইকে ফোন দিয়ে সুপারভাইজারকে তার গন্তব্যের ঠিকানা জানিয়ে দিতে বলে। ভিকটিমের ভাই ফোনে সুপারভাইজারকে নবীনগরে নামিয়ে দিতে বললেও তারা কৌশলে ভিকটিমকে আব্দুল্লাহপুরের দিকে নিয়ে আসেন। আব্দুল্লাহপুরে বাস পৌঁছানোর পর অন্য সব যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হলেও ওই নারীকে জোরপূর্ব আটকানো হয়। ওই নারী চিৎকার করলে পাশেই থাকা র‌্যাব-১ এর একটি দল ওই তিনজনকে আটকসহ ভিকটিমকে উদ্ধার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানান, তারা প্রত্যেকে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ বাসের কর্মচারী। খলিল মিয়া বাসের চালক, মেহেদী হাসান বাবু সুপারভাইজার ও রাকিব হোসেন বাসের হেলপার। তারা ওই নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণের উদ্দেশ্যে কৌশলে অপহরণের পরিকল্পনা করেন।

Advertisement

আটক চালক খলিল মিয়া পেশা গত এক বছর ধরে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে নিয়োজিত থাকলেও তার নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। বাসেরও কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।

আটক মেহেদী হাসান বাবু প্রায় ৬ বছর ধরে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ গাড়ির সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত আছে। হেলপার ও চালকের সঙ্গে যোগসাজশ করে নারী ও অপরিচিত যাত্রীদের জিম্মি, অপহরণ করে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে আসছিলেন তিনি।

রাকিব হোসেন ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ বাসের হেলপার হিসেবে যোগদানের আগে চায়ের দোকানে কাজ করতেন। রাকিব মূলত কম বয়সী নারী যাত্রীদের টার্গেট করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তাদের মাধ্যমে আগেও অনেক নারী যাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা গ্রাম থেকে আসা কম বয়সী নারী যাত্রীদের বাসে তোলার পর কৌশলে অন্য যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাস নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং তার ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে সেগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতেন।

আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এসআর/এমএস