আন্তর্জাতিক

নারী চালককে মরিয়া হয়ে খুঁজছেন মসজিদে হামলায় বেঁচে যাওয়া মাজদা

ছেলের মা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন মাজদা আল হাজি নামের এক নারী। মসজিদে বন্দুকধারীর গুলিতে নিজের বাবা-বন্ধু ও প্রতিবেশি মুসলিমদের প্রাণ হারাতে দেখেছেন চোখের সামনে।

Advertisement

ভয়াবহ সেই হামলাকারীর বন্দুকের গুলি এড়িয়ে কাঁধে ছোট্ট ছেলেকে তুলে নিয়ে কোনো রকমে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন তিনি। ছেলেকে নিয়ে তিনি যখন দৌড় শুরু করেন, তখন বন্দুকধারী তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

হামলাকারী শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্টের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ছেলে-সহ প্রাণে বেঁচে যান মাজদা। মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসার পর রাস্তায় একটি গাড়ি দেখতে পান তিনি। সেই গাড়ির চালকের আসনে বসা ছিলেন একজন নারী। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরেছিলেন ওই নারী চালক।

আরও পড়ুন : জেসিন্ডাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার দাবি

Advertisement

তিনি গাড়ির দরজা খুলে দিলে উঠে বসেন মাজদা। পরে সেখান থেকে আরো কয়েকজন নারীকে নিয়ে তিনি দ্রুত সটকে পড়েন। এখন ওই গাড়ি চালক নারীকে মরিয়া হয়ে খুঁজছেন মৃত্যুমুখ থেকে বেঁচে ফেরা মাজদা। তাকে একবারের জন্যে হলেও ধন্যবাদ জানাতে চান তিনি। কারণ পাঁচ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে মসজিদের সামনে থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন ওই নারী চালক।

মাজদা বলেন, পাঁচ মাস আগে তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ছেলের জন্মের পর প্রথমবারের মতো ১৫ মার্চ (শুক্রবার) ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে বাবা-স্বামীর সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়তে যান তিনি। মসজিদের ভেতরে ঢোকার পর অনেক মুসল্লি তার ছেলের সঙ্গে খেলছিলেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে দেখতে পান তার আশপাশে থাকা লোকজন হঠাৎ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ছেন। এভাবে লুটিয়ে পড়া দেখে তিনি ছেলেকে কাঁধে তুলে নিয়ে দৌড় শুরু করেন।

মাজদা আল হাজি বলেন, বন্দুকধারী আমার পেছনে একজনকে এবং সামনে একজনকে গুলি করে...আমি তাকে পেছন থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু লোকজন বলছিল, সে আমার পেছনে দৌঁড়াচ্ছে। সে আমাকেও গুলি করেছিল।

আরও পড়ুন : মহানবীর (সা.) উদ্ধৃতিতে শান্তির বার্তা প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডার

Advertisement

৩০-৪০ বছর বয়সী এক নারী একটি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন মসজিদের সামনের রাস্তা দিয়ে। মাজদা হাজি ওই গাড়ির ভেতরে লাফিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। ‘আমি গাড়ির ভেতর উঠে বসেছিলাম এবং তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী ঘটেছে? এমন সময়ও কিছু মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল। সম্ভবত তাদের জানালা বন্ধ ছিল, যে কারণে বাইরে কী ঘটছে সেটা তারা দেখতে পায়নি।’ ‘আমি গাড়িতে উঠে কান্না শুরু করি। পরে ওই নারী চালক গাড়ির বাইরে বেরিয়ে মানুষকে থামতে বলেন।’ ওই নারী চালকের পরনে কালো পোশাক ছিল। পোশাকে একটি খাবারের কোম্পানির লোগো ছিল। পরে সড়কের অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা আরো দু’জন মুসলিম নারীকে নিয়ে তিনি গাড়ি দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেন।

মাজদা বলেন, কিছু দূর যাওয়ার পর একটি বাড়ির কাছে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন চালক। পরে সেখান থেকে একজন নারী তাদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের অপেক্ষায় কেটে যায় ৬ ঘণ্টা। চোখের সামনেই মাজদা তার ৬৬ বছর বয়সী বাবা আলমি আব্দু কাদিরকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন। কিন্তু তার স্বামীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা সেই সময় জানতে পারেননি।

আরও পড়ুন : নিউজিল্যান্ডে পদযাত্রায় মানুষের ঢল, ছড়ালেন ভালোবাসার বার্তা

আতঙ্কিত মাজদা মসজিদে ভয়াবহ ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় স্মৃতিশক্তি কিছুটা হারিয়ে ফেলেছেন। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি তার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন। মাজদা এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন কখনই হননি। তিনি বলেন, ওইদিন সন্ধ্যার দিকে পুলিশের মাধ্যমে স্বামী সুস্থ রয়েছেন বলে তিনি জানতে পারেন।

মসজিদে হামলার ৯দিন ও বাবাকে দাফনের দু'দিন পর মাজদা এখন অজ্ঞাত ওই নারী গাড়ি চালককে খুঁজছেন। একবারের জন্য হলেও তার সঙ্গে মিলিত হতে চান; গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নিয়ে নিরাপদ স্থানে নামিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চান তিনি।

ওইদিন বিকেলে দু’জন নারী তাকে বলেছিলেন, সব মানুষই সমান। মাজদা বলেন, ‘‘আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই...যদিও ধন্যবাদ কিছুই না। আমি আপনাকে দেখতে চাই।’’

সূত্র : রেডিও নিউজিল্যান্ড।

এসআইএস/এমএস