জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিষয়ে আগের তুলনায় দম্পতিরা এখন অনেকটাই সচেতন। মাঠকর্মীদের দেখা না পেলেও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে নিজেরাই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রয়োজনে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে তারা জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
Advertisement
গত ১৫ বছরে এমআর (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) এর পরিমাণও নেমে এসে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবে মাঠপর্যায়ে কর্মীদের দেখা না পাওয়ায় ক্ষোভের কথা বলেছেন রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের দম্পতিরা।
তাদের তাবি, এখন মানুষ অনেকটাই সচেতন। কর্মীরা না আসলেও তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন।
রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ডাঙ্গিরপাড়া এবং পাইকান গ্রামের একাধিক দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই গ্রামের দায়িত্বে থাকা পরিবার কল্যাণ সহকারীর দেখা পাওয়া যায় না। তাই তারা নিজেরাই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। তবে অধিকাংশ সময়ে সেখানে গিয়েও কর্মকর্তা বা কর্মীদের দেখা মেলে না এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া যায় না। তাই তারা নিজ অর্থ ব্যয় করে বাজার থেকে ইনজেকশন, বড়ি কিনে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করছেন।
Advertisement
জেলা পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুরের ৮ উপজেলার ৮২টি ইউনিয়নে ৬৭টি কেন্দ্র রয়েছে।
সন্তান জন্মদানে সক্ষম ৬ লাখ ৪৩ হাজার দম্পতির পরিবার-পলিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ পদ্বতি বিষয়ে ৬৭টি কেন্দ্রের জন্য অনুমোদিত ৪৬৬ জন পরিবার কল্যাণ সহকারীর (এফডব্লিউএ) বিপরীতে কাজ করছেন ৩০৫ জন। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৪৫টি পদ অনুমোদিত থাকলেও বর্তমানে আছেন ৩৬ জন। এছাড়াও ৮৪ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকার বদলে ৬৫ জন এবং ৬৭টি অনুমোদিত ফার্মাসিস্ট পদের বিপরীতে ২৫ জন কাজ করছেন।
চন্দনপাট ইউনিয়নের ডাঙিরপাড় গ্রামের শাবানা, সাবিনা, মঞ্জুয়ারাসহ একাধিক গৃহবধূ জানান, ওই গ্রামের দায়িত্বে থাকা পরিবার কল্যাণ সহকারী নিয়মিত ভিজিট করেন না। ফলে তারা কেন্দ্রে গিয়ে অথবা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে নেন। একই অভিযোগ করেন মোতালেব মিয়া নামে এক কৃষক।
তাদের দাবি, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্মীদের দেখা না পেলেও তারা এখন এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। তাই নিজেরাই আগ্রহী হয়ে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। তবে সময়মতো উপকরণ (ইনজেকশন) সরবরাহ করা হলে বাজার থেকে কিনতে হতো না। এতে তাদের ৬০ টাকা করে সাশ্রয় হতো।
Advertisement
এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের বয়োজেষ্ঠ্যদের মাঝেও এখন এ বিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই তারা নির্বিঘ্নে পরিবার-পরিকল্পনা বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করেন এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।
চন্দনপাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা রত্না রানী দাস বলেন, গত ১৫ বছর আগে গর্ভপাত ঘটাতে প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ জন মা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতেন। ধীরে ধীরে তা কমে এসে বর্তমানে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এখানে দম্পতিদের সচেতনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে তনি দাবি করেন।
নিয়মিত মাঠে যাওয়ার বিষয়টি দাবি করে পরিবার কল্যাণ সহকারী কল্পনা মুখার্জি বলেন, তার অধীনে তিনটি ওয়ার্ডের ১২শ দম্পতি রয়েছে। ওই দম্পতির প্রতিটি বাড়িতে এক রাউন্ড দিতে তার দু’মাস সময় লাগে।
অনেক পদ্ধতির মধ্যে ইনজেকশন ও বড়ি পদ্ধতি এলাকায় জনপ্রিয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে এবং মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তাদের এসব উপকরণ সরবরাহ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য রাশেদা বেগম জানান, এখন প্রতিটি পরিবারের নারী ও পুরুষসহ সকলেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিষয়ে বেশ সচেতন। তার ওয়ার্ডে যেভাবে কাজ হচ্ছে এতে তিনি সন্তুষ্ট।
জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে রংপুর জেলা পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. শেখ মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে শতকরা ৭০ জন দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির আওতায় আছেন। বাকি ৩০ জনের মধ্যে স্বামী বিদেশে, গর্ভবতী ও সন্তান ধারণের জন্য প্রক্রিয়াধীন এবং ৭ শতাংশ অপূরণীয় চাহিদা রয়েছে। জনবল সংকট না থাকলে ওই ৭ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হতো।
মানুষের মাঝে সচেতনতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের এক জরিপে দেশে সন্তান জন্মদানের গড় হার ছিল ৬.৩ জন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) তথ্যমতে তা নেমে ২.৩ জনে এসেছে। সারাদেশের তুলনায় রংপুরে বর্তমান জন্মহার ১.৯ জন।
আগের সংবাদগুলো পড়ুন :
মৌলভীবাজারে মাত্র ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র সেবা দেয়ার উপযোগী
সচেতনতার অভাবে ৫টিরও বেশি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন নারীরা
স্বাস্থ্যকর্মীর দেখাই পান না চরবাসী
কেউ চান ছেলে কেউ মেয়ে, এতেই বড় হচ্ছে পরিবার
জনবল সংকটে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যাহত
রাজশাহীতে পরিবার পরিকল্পনা সেবার বেহাল দশা
তিন কক্ষের পরিবার পরিকল্পনা অফিসের দুটিই তালাবদ্ধ
সাত হাজার দম্পতিকে দেখভাল করেন একজন!
প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজ করছেন পরিবার কল্যাণ সহকারীরা
পরিবার পরিকল্পনার সেবায় বদলে গেছে চাঁদপুরের একটি গ্রাম
পরিবার পরিকল্পনা সেবা পাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮০ ভাগ মানুষ
হবিগঞ্জে ১৪৪০ জন দম্পতির জন্য একজন কর্মী
এমএএস/জেআইএম