খেলাধুলা

তাসকিনের কাছে বিশ্বকাপে খেলার শান্তিটাই অন্যরকম

লম্বা একটা সময় দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল। ইনজুরি আর অফ ফর্মের কারণে। শেষ পর্যন্ত সব কিছু জয় করে গত বিপিএলে ঠিকই মাঠে ফিরেছিলেন তাসকিন আহমেদ। একেবারে পুরনো রূপে। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেললেও হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। যার পুরস্কার স্বরূপ, দীর্ঘদিন পর, নিউজিল্যান্ড সিরিজে আবারও দলে ফিরতে পারলেন তিনি।

Advertisement

কিন্তু কি দুর্ভাগ্য তাসকিনের! বিপিএলে নিজের শেষ ম্যাচে এসে ফিল্ডিং করতে গিয়ে গোড়ালি মচকে যায় তার। যার ফলশ্রুতিতে নিউজিল্যান্ডের দলে ডাক পেলেও শেষ পর্যন্ত আর যেতে পারলেন না। ইনজুরি সারাতে থেকে যেতে হয় দেশেই।

পূনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আরও আগেই। সে প্রক্রিয়ায় থাকার কারণে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলতে পারছেন না তাসকিন আহমেদ। আশা করছেন, হয়তো বা সুপার লিগ থেকে পুরোপুরি মাঠে ফিরতে পারবেন। মাঠে এসে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রানিংটাও করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে তাসকিনের কি অবস্থা, সেটা জানাতে তিনি নিজেই উপস্থিত হলেন মিডিয়ার সামনে। সেখানেই নানা কথার ফাঁকে তাসকিন জানিয়ে দিলেন, তার একমাত্র স্বপ্ন বিশ্বকাপে খেলা। যে কারণে বিশ্বকাপকেই তিনি প্রাধান্য দিচ্ছেন।

Advertisement

সাংবাদিকদের মুখোমুকি হওয়ার পর প্রথমেই জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার অবস্থা কি এখন? জবাবে তাসকিন বলেন, ‘আল্লাহ রহমতে এখন অবস্থা ভালো। আজকে (শনিবার) আমার দ্বিতীয় রানিং সেশন হলো। আশা করি এভাবে স্মোথলি চলতে থাকলে দ্রুত বোলিংও শুরু হবে ধীরে ধীরে। রানিং এর ইন্টেনসিটি বাড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা, পেইন ফ্রি। এভাবে স্মোথলি চলতে থাকলে খুব দ্রুতই বোলিং শুরু করা যাবে।’

কবে নাগাদ বোলিং শুরু করতে পারবেন? জানতে চাইলে তাসকিন বলেন, ‘আল্লাহ যদি চায় এই মাসেই বোলিং শুরু করব। এটা হচ্ছে আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী। আমার এবং ফিজিও’র যে টিমটা আছে, প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের জন্য রিহ্যাবের প্ল্যান থাকে। আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী সুপার লিগের মধ্যেই খেলা শুরু করার। প্রগ্রেস ভালো হলে এর আগেও হতে পারে। যাই হবে, আমি রিহ্যাবটা ভালোমত শেষ করেই শুরু করতে চাচ্ছি।’

দীর্ঘদিন জাতীয় দলে নাই, সোজা আয়ারল্যান্ড সিরিজে সুযোগ পেলে চ্যালেঞ্জটা কেমন হবে? তাসকিন বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো প্রত্যেকদিনই। শুধু এই সিরিজ বলে কথা নয়। যেহেতু আমি ইনজুরি ও অফ ফর্মের কারণে বছর খানিকের মত জাতীয় দলে খেলিনি। আমার জন্য একটু কঠিন; কিন্তু বাস্তবতাও মানতে হবে। যেহেতু আমি ইনজুরিতে ছিলাম। ইনজুরির কারণে ভালো খেলতেও পারিনি।’

শুধু পারফর্মেন্স নয়, রোডসের চাওয়ায়ও তো দলে ফিরেছিলেন। বিষয়টা কিভাবে দেখছেন? তাসকিন বলেন, ‘আসলে ইনজুরিতে পড়ার পর জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আমার খোঁজ নিয়েছিলেন। প্রায় প্রায়ই ফলোআপ করছে, কতটুকু প্রগ্রেস, কি অবস্থা? এসব। এ বিষয়গুলো আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে। আমাদের দলের কোচ, অধিনায়ক, সিনিয়র ক্রিকেটাররা খোঁজ নিচ্ছে। এসব শুধু আমি না, যে কোনো ইনজুরড প্লেয়ারের জন্যই যদি করা হয় সে অনুপ্রাণিত হবে।

Advertisement

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন অনেকটাই বাংলাদেশের মত গরম থাকবে, অনেকগুলো ম্যাচে, খেলোয়াড়দের কিংবা আপনার ফিটনেস ইস্যু নিয়ে কি কিছু ভেবেছেন? তাসকিন বলেন, ‘ওভারঅল বোলিং অ্যাটাকে যারা আছেন, তাঁরা প্রুভেন, ভালো করছে। আমারও কয়েকটা বড় আসর খেলার সৌভাগ্য হয়েছে, ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে যদি আমি সুযোগ পাই। বিশ্বাস আছে সুযোগ হলে ভালো করব। এটাও ঠিক যে অনেকগুলো খেলা। ফিটনেসটাও বড় ইস্যু। আপনারাও জানেন যে বিপিএলের শেষ ম্যাচে আমি কিভাবে ইনজুরড হয়েছি। ওটা টোটালি অ্যাকসিডেন্ট ছিল। ইনজুরি আসলে যে কোনো সময় যে কারোরই হতে পারে; কিন্তু নিজের কেয়ারফুল থাকা, মেন্টেইন করাটা বড় বিষয়। আমার এটাও বিশ্বাস আছে বাংলাদেশ দলের সবাই এখন অনেক প্রফেশনাল। সবাই টপ লেভেলে ক্রিকেট খেলছে, সবাই সবার মেইন্টেনেন্সটা ঠিক মতই করছে।’

বিশ্বকাপ নাকি ক্যারিয়ার দীর্ঘ করা? কোনটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন? তাসকিন বলেন, ‘সত্যিকথা বলতে আমি বিশ্বকাপকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ, বিশ্বকাপ আমার স্বপ্ন। আমি জানি না কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে কি হবে। এত লম্বা চিন্তা-ভাবনাও আমি করছি না। আমার মূল ফোকাস হচ্ছে, ১০০% ফিট হয়ে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া। কারণ আমি ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছি। বিশ্বকাপে খেলার শান্তিটাই অন্যরকম। এখনো মনে পড়লে, বিশ্বকাপের স্মৃতিগুলো খুবই ভালো লাগে। ২০১৯ সালে আরেকটা বিশ্বকাপ আসছে। সবার কাছে আমি দোয়া চাইব সুস্থ থেকে বিশ্বকাপে যাওয়া ও ভালো করার। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ভালো করতে পারলে, সেটা অন্যরকম ফিলিংস হবে, এটা বলে বোঝানো যাবে না।’

আয়ারল্যান্ডে কামব্যাক করার জন্য (ডিপিএলে) সুপার লিগ কি ভালো মঞ্চ হবে? তাসকিন বলেন, ‘দলে থাকব কি থাকব না এটা আমার কন্ট্রোলে নেই। হার্ডওয়ার্ক করা আমার কন্ট্রোলে আছে। এটাই আমি বিশ্বাস করি। হার্ডওয়ার্ক করলে আমার বিশ্বাস পারফর্মেন্স ভালো হবেই।’

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম