আন্তর্জাতিক

বাঘুসের পতন দিয়ে আইএসের খিলাফতের অবসান

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) বলছে, বাঘুসে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পাঁচ বছরের ‘খিলাফতের’ অবসান হয়েছে। কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী এসডিএফ বলছে, সিরিয়ার ছোট্ট একটি গ্রাম বাঘুসে ছিল আইএসের শেষ ঘাঁটি এবং সেখানে তারা নিজেদের পতাকা উড়িয়েছে।

Advertisement

এসডিএফের মিডিয়া অফিসের প্রধান মুস্তাফা বালি এক টুইট বার্তায় তথাকথিত খিলাফতের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ এবং আইএসের দখল করা সব এলাকা শত ভাগ মুক্ত করার খবর জানান। এক সময় আইএসের শক্তি যখন তুঙ্গে ছিল; তখন তারা সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতো। আয়তনের দিক থেকে সেটি ছিল ব্রিটেনের সমান।

সেখানকার বাসিন্দা এক কোটি লোকের ওপর তারা জঙ্গি ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তেল বিক্রি, চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং ডাকাতি করে তারা শত শত কোটি ডলার আয় করেছিল। সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা আইএসের পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল।

আরও পড়ুন : ভারতে ঘরে ঢুকে মুসলিম পরিবারকে বেধড়ক মারপিট (ভিডিও)

Advertisement

কিন্তু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং কুর্দি-প্রধান এসডিএফ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হারতে হারতে তারা শেষ অবস্থান নিয়েছিল পূর্ব সিরিয়ার বাঘুসে। এখন তাদের সেই ঘাঁটিরও পতন ঘটলো। এসডিএফ আইসএস-এর বিরুদ্ধে চুড়ান্ত লড়াই শুরু করে গত মার্চে।

কিন্তু সেই অভিযানের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে যখন জানা যায় যে আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন ভবন, তাঁবু ও সুড়ঙ্গগুলোতে বহু বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছেন। লড়াই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাজার হাজার নারী ও শিশু সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

বিবিসির প্রতিনিধিরা বলছেন, ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলেও আইএসকে এখনও বিশ্ব নিরাপত্তার বিরুদ্ধে একটা প্রধান হুমকি বলে মনে করা হয়। আইএসের প্রভাব ওই এলাকায় এখনও নিঃশেষ হয়ে যায়নি।

আরও পড়ুন : জেসিন্ডাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার দাবি

Advertisement

নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং ফিলিপিন্সে এখনও বহু আইএস অনুসারী রয়েছে। ইরাকে ২০০৩ সালের মার্কিন অভিযানের পরবর্তীকালে ইরাকী আল-কায়েদা থেকে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাকের জন্ম হয়। ২০১১ সালে তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দেয়।

সিরিয়ার রাক্কা হয় তাদের রাজধানী। তাদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি গোষ্ঠীটির নতুন নাম দেন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লেভান্ট (সিরিয়া) - সংক্ষেপে আইসিস বা আইসিল।

তারা মসুল এবং তিকরিতসহ অনেক ইরাকি শহর এবং সিরিয়ার বৃহত্তম হোমস তেলক্ষেত্র দখল করে নেয়। এর পর ২০১৪ সালে জিহাদি গ্রুপটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়- যার নাম হয় ইসলামিক স্টেট। আইএস যোদ্ধারা ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা এবং ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসীতে পরিণত করে। তারা পশ্চিমা জিম্মিদের শিরশ্ছেদের বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রচার করে।

আরও পড়ুন : মসজিদে হামলা : ছেলের জানাজায় এসে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন মা

ওই বছর সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী তাদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে। তবে বাঘুজে পরাজয়ের পরও মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে আইএসের ১৫ থেকে ২০ হাজার সশস্ত্র সদস্য ওই অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এর অনেকগুলোই স্লিপার সেল অর্থাৎ তারা এখন গোপনে অবস্থান করছে এবং আইএস পুনর্গঠিত হওয়া শুরু করলেই তারা আবার ভেসে উঠবে।

বাঘুসের পতন যখন অত্যাসন্ন তখনও আইএস তাদের কথিত মুখপাত্র আবু হাসান আল-মুহাজিরের একটি অডিও বার্তা প্রচার করেছিল। তাতে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন খিলাফত শেষ হয়ে যায়নি। বিবিসি বাংলা।

এসআইএস/এমকেএইচ