দেশজুড়ে

হবিগঞ্জে ১৪৪০ জন দম্পতির জন্য একজন কর্মী

হবিগঞ্জে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে গড়ে প্রতি ১ হাজার ৪৪০ দম্পতির জন্য একজন মাঠ কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে ঠিকমতো গর্ভবতী নারীদের দেখভাল করা যাচ্ছে না। আবার পরিবার পরিকল্পনা সেবায় তেমন অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। তবে দম্পতিদের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই।

Advertisement

সরেজমিনে সদর উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়ন ঘুরে জানা গেছে, এখানে মোট ২১টি গ্রাম রয়েছে। তিনটি ভাগে বিভক্ত করে তিনজন মাঠ কর্মী এখানে দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু আছেন দুইজন। তারা ১১টি গ্রামে কাজ করছেন। আর বাকি ১০টি গ্রামের জন্য যে মাঠ কর্মী ছিলেন তিনি বদলি হওয়ায় পদটি খালি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এখানে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। এ ইউনিয়নে জন্মদানে সক্ষম মোট ৩ হাজার ৮৬৩ জন দম্পতিকে শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও এর বাইরে রয়ে গেছেন অনেকেই। যার সঠিক পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। এখানে দম্পতিদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে বেশ আগ্রহও আছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে লোকবল সংকট ও সঠিক তদারকির অভাবে তারা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। গর্ভবতীরাও সঠিক পাচ্ছেন না।

ওই ইউনিয়নের কাকিয়ার আব্দা গ্রামের মুরাদ মিয়ার স্ত্রী রত্না বেগম জানান, তার দুটি জমজ সন্তান হয়েছে প্রায় ৯ মাস পূর্বে। সন্তান জন্মের আগে শুধু একবার এসে পরিবার পরিকল্পনার লোকজন দেখে গেছে। তারা কিছু আয়রন ট্যাবলেটও দিয়ে গেছে। এরপর তারা আর এসে খোঁজ নেয়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায় না।

একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী রুমানা আক্তার জানান, তার এক সন্তান রয়েছে। তিনি আবারও গর্ভধারণ করেছেন প্রায় ৫ মাস হয়েছে। এর মাঝে মাত্র একবার এসে তারা দেখে গেছে। বলেছে এখনও সময় হয়নি। হলে আয়রন ট্যাবলেট দেবে। অবশ্য এ জন্য ২০ টাকা ফিও নিয়েছে।

Advertisement

তেঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কুরবার আলী লিটন জানান, পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা নিয়মিতই এসে খোঁজ খবর নেয়ার কথা। কিন্তু তারা ঠিকমতো খবর নেয় না। গর্ভবতীদেরও ঠিকমতো সেবা বা ওষুধ তেমন কিছুই দেয় না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারা সেবা দেবে দূরের কথা, অনেকেই বিভিন্ন ক্লিনিকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তারা সেখানে গর্ভবর্তী বা সেবা গ্রহীতাদের পাঠিয়ে দেয়। এটি দুঃখজনক।

তেঘরিয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সুপারভাইজার তাপস রায় জানান, একেকজন গর্ভবতী নারীকে গর্ভধারণের শুরু থেকে সন্তান জন্মদানের পূর্বে চার বার এবং সন্তান জন্মদানের পরে আরও চার বার তদারকি করা হয়। তবে মাঠ কর্মীর সংকট থাকায় শতভাগ সেবা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না।

তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনার বিষয়েও মানুষের মাঝে বেশ আগ্রহ আছে। আমরা তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করি। কাউন্সিলিং করি। দিন দিন তাদের আগ্রহ বাড়ছে। কারও কাছ থেকে কোনো মাঠকর্মীর টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি সেবা।

Advertisement

সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোছা. শিরিন আক্তার জানান, একজন নারী যখন গর্ভবতী হন তখন মাঠ কর্মীরা টিটি টিকা দেন। পুষ্টি সম্পর্কে পরামর্শ দেন। যাতে তাদের সেফ ডেলিভারি হয় সে সম্পর্কে পরামর্শ দেন। শিশুদের পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরামর্শ দেন। এফডব্লিউতে (পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে) যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। তবে জনবল ঘাটতির কারণে কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। শতভাগ সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি।

ফি নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে যদি এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাই তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় মোট ৬৩ হাজার ৩৩৭ জন সক্ষম দম্পতি তালিকাভুক্ত রয়েছেন। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন ৩৯ শতাংশ দম্পতি। খাবার বড়ি নিচ্ছেন ২৪ হাজার ৫৭৭ জন নারী। ইনজেকশন নিচ্ছেন ৮ হাজার ৬৪১ জন। ১০ বছর মেয়াদি পদ্ধতি (আইওডি) গ্রহণ করেছেন ২ হাজার ৫৯১ জন। এ পদ্ধতি অনেকের শরীরের সঙ্গে খাপ খায় না। ফলে শারীরিক নানা সমস্য দেখা দেয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে অনেকেই আবার খুলে নেন। কেউ চাইলে সেটি খুলে পুরারায় গর্ভ ধারণ করতে পারেন। ৩ বছর মেয়াদি (ইমপ্ল্যান্ট) পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন ২ হাজার ৬৪১ জন। পুরুষদের মাঝে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন ২ হাজার ৪৭৫ জন। নারী স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন (লাইগেশন) ৫ হাজার ৯৮৭ জন। এ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি অর্জন হয়েছে ৮১ শতাংশ। সদর উপজেলায় ৫৪টি ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ১ জন করে মাঠ কর্মী কাজ করার কথা। কিন্তু কর্মরত আছেন ৪৪ জন।

আরএআর/এমএস