দেশজুড়ে

‘ব্রিজের ওপর উঠলে বুকটা কেঁপে ওঠে’

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী বেইলি ব্রিজটি আবারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এপাশ-ওপাশের কয়েকটি পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। ফলে লবণ ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা মালামাল পরিবহন নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ব্রিজটি পারাপার হতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয়রাও।

Advertisement

ব্রিজটির লোহার কয়েকটি পাটাতনের জয়েন্ট খুলে যাওয়ায় চলাচলের সময় ভয়ানক শব্দ হয়। এতে ভেঙে পড়ায় ভয়ে তটস্ত থাকেন চলাচলকারীরা। গত দুই বছর আগে মেরামত করার পর আবারও ভঙ্গুর হওয়ায় মাঝে মধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনাও।

পূর্ব গোমাতলীর পোল্ট্র ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, বৃহত্তর গোমাতলীতে প্রায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি এলজিইডির সড়ক রয়েছে। প্রায় ২০ হাজার একর লবণ মাঠে গ্রীষ্মে লবণ উৎপাদন ও বর্ষায় বাগদা চিংড়ি চাষাবাদ করা হয়। উৎপাদিত এসব পণ্য পরিবহনে স্থল যোগাযোগের জন্য ঈদগাঁও-গোমাতলী সড়কের গোমাতলী বেইলি ব্রিজটি একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু ছয় মাস আগে থেকে গোমাতলী বেইলি ব্রিজটির উভয় পাশ ও মাঝখানে ক্ষয়ে গিয়ে স্থানে-স্থানে গর্ত হয়ে গেছে। ফলে যাতায়াত নিয়ে লবণ-মৎস্য চাষি, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ইজিবাইক চালক শফি আলম বলেন, উৎপাদনশীল এলাকা হিসেবে গোমাতলী কেন্দ্রীক লাখো মানুষের কর্মসংস্থান। সে হিসেবে জীবন সংশ্লিষ্ট নানা ধরণের পণ্য নিয়মিত পরিবহন করতে হয়। কিন্তু মালামাল নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে অনেক সময় ভাঙা পাঠাতনে চাকা ঢুকে গিয়ে গাড়ি উল্টে যাবার ঘটনাও ঘটেছে। তাই ব্রিজের ওপর উঠলে বুকটা কেঁপে ওঠে।

Advertisement

লবণ চাষি মালিক হাফেজ জমির উদ্দিন জানিয়েছেন, ব্রিজের প্রায় সব পাটাতনের জয়েন্ট খুলে গেছে। কিন্তু ভাঙ্গা বা খুলে যাওয়া অংশে কোনো প্রকার বিপজ্জনক সংকেত বা নিশানা না থাকায় নতুন আসা গাড় গুলো দুর্ঘটনায় পড়ছে বেশি। সড়কটিতে বড় কোনো যানবাহন না থাকায় ছোট যানেই ভরসা করতে হচ্ছে ব্রিজের এপার-ওপারের লাখো মানুষের। সেসব যানবাহনও ব্রিজটি পার হতে অনীহা প্রকাশ করায় ব্রিজটি এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের একাধিক পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা (সিএনজি), ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি ও বাইসাইকেল চলাচল করছে। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেটে ব্রিজ পার হতে নিরাপদ বোধ করছে। গাড়ি পারাপারের সময় পাঠাতন নড়ে গিয়ে যেভাবে আওয়াজ হয় এতে যেকেনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। রাতে ভাঙা ব্রিজের আশপাশে বাতি বা আলোর ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ব্রিজের ভাঙ্গা পাটাতনের ভেতর পড়ে যান বলেও দাবি করেন স্থানীয় অধিবাসী সামশুল আলম।

পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় সদস্য কলিম উল্লাহ জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লবণ মাছ গুলো আগে মিনিট্রাক ও মাহিন্দ্রাতে পরিবহন হতো। কিন্তু ব্রিজটির এই অবস্থায় হওয়ার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ, যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ী চলাচল করে। যাতায়ত করে কয়েকশ শিক্ষার্থী। এই ব্রিজের কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে এলজিইডি’র সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, লবণাক্ত আবহাওয়ার কারণে কয়েক বছর পরপর বেইলি ব্রিজটির পাটাতন ক্ষয়ের ঘটনা ঘটে। সরকারি কাজ বিধায় সংস্কারে কিছু প্রক্রিয়া মানতে হয়। ব্রিজটি মেরামতের প্রক্রিয়া চলছে।

Advertisement

সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/এমএস