দেশজুড়ে

মায়ের পথে শিশু তাইম, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭

বরিশাল নগরীর তেঁতুলতলা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত শিশু তাইমকে (৭) ঢাকা নেয়ার পথে মারা গেছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৭ জন। শুক্রবার দুপুরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নেয়ার পথে শিশু তাইমের মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল-বানারীপড়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

Advertisement

এ দুর্ঘটনার পরপরই শিশু তাইমের মা পারভীন বেগমেরও (৩৫) মৃত্যু হয়। তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকার মো. মোখলেছুর রহমানের স্ত্রী।

এ দিকে ৭ যাত্রী নিহতের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. নুরুজ্জামানকে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা এবং আহত ৪ জনকে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে।

Advertisement

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ঝালকাঠী জেলা সদরের সেওতা এলাকার সুশান্ত হালদারের মেয়ে বরিশাল বিএম কলেজের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শিলা হালদার (২৪), ঝালকাঠী সদরের নৈয়ারী এলাকা ইছহাক আলী হাওলাদারের ছেলে খোকন হাওলাদার (৩০), বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকার মো. মোখলেছুর রহমানের স্ত্রী পারভিন বেগম (৩৫) ও তার ছেলে তাইম (৭), বাকেরগঞ্জ উপজেলার ইউনুস শিকদারের ছেলে মানিক শিকদার (৩৫), পিরোজপুর জেলা সদরের দুর্গাপুর এলাকার শাখায়েত সরদারের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বেগম (৪০) এবং গণপাড়া এলাকার ইদ্রিস খানের ছেলে মাহেন্দ্র চালক সোহেল খান (২৯)।

আহতরা হলেন, তন্নী আক্তার (১৭), বিএম কলেজ ছাত্র মো. সুমন (২৫) ও দুলাল হাওলাদারসহ (৩০) চার জন ।

আহতদের মধ্যে ২ জনকে ইতোমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ২ জনই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ দিকে দুর্ঘটনার খবরে হতাহতদের স্বজনরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভিড় করেন। তাদের আহাজারিতে হাসপাতালে হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

Advertisement

আহত যাত্রীদের স্বজনরা জানান, ১১ জন যাত্রী নিয়ে মাহেন্দ্র আলফাটি (ডিজেল চালিত থ্রি হুইলার) বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা যাচ্ছিল। অপরদিকে বানারীপড়া থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশালের দিকে আসছিল দুর্জয় নামের বাসটি। দুর্ঘটনা কবলিতস্থান তেঁতুলতলা এলাকা অতিক্রমকালে বেপরোয়া গতিতে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাহেন্দ্রর সামনের ডান অংশ ভেঙে যায়। এতে মাহেন্দ্রর ৭ যাত্রী নিহত ও ৪ জন গুরুত্বর আহত হন। স্বজনরা অভিযোগ করেন, দুর্জয় পরিবহন নামে ওই বাসের বেপরোয়া চলাচলের কারণেই প্রাণ গেছে ৭ যাত্রীর। মুখোমুখি সংঘর্ষের পরও বাসটি সেখানে না থামিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাহেন্দ্রকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। স্বজনরা ঘাতক বাসচালকের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।

নগরীর বিমানবন্দর থানা পুলিশের ওসি আব্দুর রহমান মুকুল জানান, খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে ২ জন মারা যান। অপর ৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আহত ৪ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ওসি আব্দুর রহমান মুকুল জানান, ঘটনার পরপরই বাসটি দ্রুতগতিতে চালিয়ে চলে যাওয়ায় চালক ও হেলপারকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তাদের আটকে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

সাইফ আমীন/এমএএস/পিআর