বিশেষ প্রতিবেদন

‘বিল চান না’ ঠিকাদার, তাই অগ্রগতি শূন্য

সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বাড়াতে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ এর ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। পুরো সময় পার হলেও বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, প্রকল্পের অগ্রগতি রয়ে গেছে শূন্যের কোটায়।

Advertisement

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, এ প্রকল্পের অগ্রগতি খুবই ধীরগতিসম্পন্ন। দুই বছর পরও প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য হওয়া হতাশাব্যঞ্জক।

আরও পড়ুন >> ‘অলৌকিক’ উন্নয়ন হয়েছে বাংলাদেশে

‘সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক ওই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করছে ৪৫১ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাল্লা (Halla) গ্রুপ।

Advertisement

তবে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজের কাছে দাবি করেন, প্রকল্পের ফিজিক্যাল অগ্রগতি এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘ফিজিক্যাল ওয়ার্ক হওয়ার পরে কন্ট্রাক্টর (বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান) বিল সাবমিট (জমা) করলে আমরা পেমেন্ট (টাকা দেয়া) করি। পেমেন্ট হলে বলা যায় যে, কাজের এত শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পেমেন্ট না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কাগজে-কলমে কাজের অগ্রগতি জিরো (শূন্য) দেখাবে। আমরা পেমেন্ট করিনি বলে কাজের অগ্রগতি শূন্য বলছে আইএমইডি।’

হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, ‘কন্ট্রাক্টর দাবি না করলে তো আমি জোর করে টাকা দিতে পারি না।’ কেন দাবি করছে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বড় ফার্ম তো, একসঙ্গে বড় বিল দাবি করে আর কী! জুন মাসের আগ দিয়ে হয়তো বিল সাবমিট করবে।’

আরও পড়ুন >> প্রকল্পের ভারে পিষ্ট পরিচালকরা

Advertisement

প্রকল্পের ধীরগতির জন্য আরও একটি কারণকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ওটা ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার ছিল তো, বিদেশিদের যে চেক, সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে (দূতাবাস) পরীক্ষা (চেক) করাতে সময় লেগেছে। এজন্য ওয়ার্কে (কাজে) যেতে সময় লাগছে।’

সময় বাড়ানোর আবেদন

‘সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রকল্পের সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আবেদনটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে এবং সময় বাড়ানো হবে বলেও মনে করছেন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মো. হাবিবুর রহমান।

এ প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘সময় বাড়ানোর আবেদনে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে।’ তবে প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলেও দাবি করেন হাবিবুর রহমান।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে কেন- জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কারণ হলো, প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও কিছু পেপার ওয়ার্ক (কাগুজে কাজ) থাকে ক্লোজ (সম্পন্ন) করার জন্য। ফিজিক্যাল ওয়ার্ক শেষ হয়ে ফ্লাইট অপারেশনে চলে যাবে। কিন্তু পেপার ওয়ার্ক শেষ হতে কিছু সময় লাগবে।’

আরও পড়ুন >> প্রকল্প শেষেও ‘আন্তর্জাতিক’ মানের হচ্ছে না বাণিজ্য মেলা

সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও বরাদ্দ বাড়াতে হবে না বলেও জানান তিনি। হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বরাদ্দ বাড়ানো লাগবে না। ওই টাকাতেই হয়ে যাবে। অনলি টাইম এক্সটেনশন (শুধুমাত্র সময় বাড়ানো)।’

সময় বাড়ানোর পরও শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা

আগামী শীতে বৃষ্টিপাত হলে সময় বাড়ানোর পরও ‘সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন যথাসময়ে শেষ নাও হতে পারে বলে জাগো নিউজকে জানান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় শীতকালেও বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে আমরা কাজটা বন্ধ রাখি। কারণ ওই একই রানওয়েতে তো প্লেন ল্যান্ড করবে। তখন প্লেন স্ক্রিপ্ট করে ছিটকে পড়তে পারে। শীতে আবহাওয়া যদি ডিসফেবারে (প্রতিকূলে) না যায়, তাহলে কনফার্ম (নিশ্চিত) থাকেন, যথাসময়ে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন >> ২৪ মাসের কাজ শেষ হয়নি ৬ বছরে, বাড়ল ব্যয় ও সময়

এ প্রকৌশলী বলেন, ‘সাইটে প্ল্যান্ট ইতোমধ্যে বসানো হয়ে গেছে, মোবিলাইজেশনও হচ্ছে। প্রকল্প যথাসময়েই শেষ হবে। প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের আগেও শেষ হয়ে যেতে পারে কাজ।’

এছাড়া প্রকল্পে কোনো সমস্যা নেই বলেও দাবি করেন হাবিবুর রহমান।

পিডি/এমএআর/পিআর