দুর্নীতিকে সর্বান্তকরণে ঘৃণা করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সম্মিলিত প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সদস্যদের বার্ষিক সভা। গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) জাতীয় শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দাবি জানিয়েছেন টিআইবির সদস্যরা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণকে অধিকতর সম্পৃক্ত করে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন টিআইবির সদস্যরা। দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সভার ঘোষণাপত্রে ১০ দফা দাবিও উত্থাপন করা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় এবং সাধারণ পর্ষদে টিআইবির সদস্যদের প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় মোট ৩৫ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
সভায় সম্প্রতি টিআইবি পরিচালিত গবেষণা, অধিপরামর্শ ও প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য উপস্থাপন করেন আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম এবং নিরীক্ষাকৃত অর্থনৈতিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের পরিচালক আব্দুল আহাদ। এরপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সদস্যদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
Advertisement
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পরবর্তী অন্যান্য নির্বাচনে বহুমুখী আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং নানাবিধ অনিয়মের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও চলমান উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন টিআইবির সদস্যরা। একই সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এছাড়া অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-সহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং গণমাধ্যমসহ জনগণের মত ও তথ্যপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তারা। এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা এবং বৈদেশিক অনুদান (সেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের ১৪ ধারা বাতিলের দাবিও জানান টিআইবির সদস্যরা।
সভা শেষে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। ঘোষণাপত্রে দুর্নীতিকে সর্বান্তকরণে ঘৃণা করার সম্মিলিত অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকারের পাশাপাশি প্রত্যেকে নিজ অবস্থান অনুযায়ী একক ও সমষ্টিগতভাবে দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধের চেষ্টাসহ ন্যায্য, সুশাসিত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করতে সচেষ্ট থাকার অঙ্গীকার করা হয়।
এছাড়া বর্তমান সরকারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ নীতিকে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে ঘোষণাপত্রে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা; দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা; কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বাতিল ও আর্থিকখাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া; সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে ও সড়কে হত্যা বন্ধে যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও তার কঠোর বাস্তবায়নের দাবিও জানানো হয়।
Advertisement
বিএ