ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহমুদ হাসানকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এ আদেশ দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়েছে, ২১ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি কোনো নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এ সময় তিনি বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত থাকবেন। ঝালকাঠির রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম ফরিদ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
আগামী ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে ঝালকাঠির চার উপজেলায় (সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া) উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহমুদ হাসানকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার খবরে শহরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। তোলপাড় চলছে ফেসবুকেও।
ঝালকাঠিবাসীকে বিষয়টি জানাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহমুদ হাসান তার ব্যবহৃত অফিসিয়াল ফেসবুক (সদর সার্কেল ঝালকাঠি) আইডিতে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে একটি স্ট্যাটাস দেন।
Advertisement
সেখানে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ঝালকাঠি সদর উপজেলার এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে ২১-২৫ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। অভিযোগটা ছিল এমন, ‘উনি ভালো লোক কিন্তু উপরের মহল উনাকে নির্দেশ দিলে উনি নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করে নৌকা মার্কার বিপক্ষের লোকজনদের কেন্দ্র ছাড়া করার সম্ভাবনা থাকায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক, তাই উনাকে ২১-২৫ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হোক।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহমুদ হাসান আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো তদন্ত ছাড়াই আমাকে অব্যাহতির আদেশ দেন। আমি এ আদেশের বিপক্ষে নই; তবে আমি মনে করি, বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার ছিল। আমি সত্যিকার অর্থেই যদি অপরাধী হই, তবে আমার ফাঁসি হোক। আমার এ অব্যাহতির আদেশ দেখে কিছু কিছু অমানুষ মনগড়া মন্তব্য করছে, যা দেখে আমি মোটেই হতবাক কিংবা বিস্মিত নই। ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবনা কেন?’ আমি ঝালকাঠিতে এএসপি (সহকারী পুলিশ সুপার) হিসেবে এক বছর দুই মাস পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হিসেবে দুই বছর তিন মাস পার করছি। যোগদানের পর থেকেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং পরামর্শে সব পেশা ও শ্রেণির লোকজনকে শতভাগ সেবা প্রদানের চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, ঝালকাঠিতে আমি গত তিন বছরে ১২০০+ জমিজমার বিরোধ এবং ৪০০+ পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি করেছি। এসব সমস্যার সমাধান করতে আমি সব সময়ই শতভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছি- আর এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টাউট, দালাল ও বাটপার টাইপের লোকগুলো। আমি ঝালকাঠির অনেক লোককে পিটিয়েছি, তবে দুষ্টু শ্রেণির লোকদের... যারা মা-বাবাকে মারে, যারা নারী ও শিশুদের নির্যাতন করে, যারা ভূমিদস্যুতা করে, যারা সন্ত্রাসী, যারা চাঁদাবাজ, যারা মাদক ব্যবসায়ী, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের মারে, যারা অভদ্র ও অসভ্যতামী দিয়ে ভদ্রলোকের সম্মানহানি করে। কোনো ভালো লোক আমার দ্বারা নির্যাতিত হলে, আমার অফিসে আসুন, আমাকে বলুন। ঝালকাঠির পাবলিক-পুলিশ সকলকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি...আমি কোনো দিন কারও কাছ থেকে কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা নেইনি, সব সময়ই পাগলের মতো কাজ করেছি আত্মার তুষ্টির জন্য। ভবিষ্যতেও এভাবে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাব... এ মাটির জন্য, এ মাটির সন্তানদের জন্য।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসে এমএম মাহমুদ হাসান আরও বলেন, ‘প্রিয় ঝালকাঠিবাসী, নিন্দুক/সমালোচক/অমানুষরা আমাকে নিয়ে যা-ই বলুক... আপনারা আমার ওপর শতভাগ আস্থা রাখুন, যতদিন ঝালকাঠি আছি আপনাদের সেবায় আমি শতভাগ নিয়োজিত আছি এবং থাকব। শুরু থেকেই আমার অফিস ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে আপনাদের কাছে স্বীকৃত ছিল আর যতদিন থাকব এ ধারাই অব্যাহত থাকবে। আমি আপনাদের কল্যাণে সেবা প্রদানে অতীতেও কার্পণ্য করিনি আর ভবিষ্যতেও করব না। আপনাদের ভালোবাসা এবং দোয়াই আমার একমাত্র পাথেয়।’
Advertisement
আতিকুর রহমান/আরএআর/এমকেএইচ