নেইমার, কাইলিয়ান এমবাপে, এডিন হ্যাজার্ড, হ্যারি কেইন, এনগোলা কন্তেম, সাদিও মানে, ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন, মোহামেদ সালাহ, পল পগবা, ম্যাথিয়াস ডি লাইট, লুকাস হার্নান্দেজ, মাউরো ইকার্দি কিংবা লুবা জোভিক- লিস্টটাকে আরো লম্বা করে তোলা যায়।
Advertisement
চলতি মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই ইউরোপিয়ান মিডিয়ায় এসব ফুটবলারকে নিয়ে গুঞ্জন, আগামী মৌসুমের আগেই দল বদলের বাজারে সবচেয়ে বড় চমক নিয়ে হাজির হবেন তারা। কারণ, এরা সবাই চায় নিজ নিজ দল ছেড়ে যেতে। ক্লাবগুলোও হয়তো এসব ফুটবলারের দিকে নজর রাখছে, কাকে কিভাবে দলে নেয়া যায় সে চিন্তায়।
কিন্তু একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদই হয়তো ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করছে এবার। অন্য অনেকের চেয়ে সহজ নয়, কঠিন সমস্যার মধেই রয়েছে ক্লাবটি এবং তাদের জন্য অনেক হিসেব-নিকেশ করেই মাঠে নামতে হবে। সর্বশেষ গত ১০ বছরের মধ্যেই এই প্রথম সম্ভবত রিয়াল মাদ্রিদ ট্রান্সফার মার্কেটে প্রবেশ করবে একজন এমন যোগ্যতা সম্পন্ন ফুটবলারের খোঁজে, কিংবা এমন একজন ভবিষ্যতে যার মধ্যে অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, যিনি হবে পুরো ক্লাবেরই পোস্টার বয়।
রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ চাচ্ছেন একজন ফ্রাঞ্চাইজ ফুটবলার, যিনি হবেন আক্ষরিক অর্থেই ক্লাবের চেহারা। এ ক্ষেত্রে লিওনেল মেসিকে কোনোভাবেই আনতে পারবে না রিয়াল মাদ্রিদ। বলতে গেলে মেসি হলেন অস্পৃশ্য। এরপর বাকি থাকে আর কেবলমাত্র দুটি নাম। নেইমার এবং এমবাপে।
Advertisement
লজ ব্লাঙ্কোজদের পারিশ্রমিকের কথা বিবেচনায় আনলে ক্লাবটিতে ৬ ক্যাটাগরির ফুটবলার রয়েছেন। একেবারে শেষ থেকে শুরু করলে প্রথমে আসবে ক্লাবের একাডেমি ফুটবলাররা। যাদেরকে বলা হয় ক্লাব প্লেয়ার। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে যারা রয়েছে, তারা হলেন অনেক বেশি সম্ভাবনাময়ী।
তিন নম্বরে যারা রয়েছেন, তারা হলেন এমন ফুটবলার যারা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছেন এবং দারুণ স্পোর্টিং পারফরম্যান্সের গ্যারান্টি দেয়। চার নম্বর ক্যাটাগরির ফুটবলাররা হলেন আন্তর্জাতিক মানের। যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফুটবল খেলছেন এবং একই সঙ্গে ক্লাবের বিজ্ঞাপন হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
পাঁচ নম্বরে রয়েছেন পেনাল্টিমেট ক্যাটাগরি। এই পর্যায়ের ফুটবলাররা হচ্ছেন ক্লাব কর্তৃক নির্ধারিত কৌশলগত খেলোয়াড়। এরা হলেন আবার এলিট ফুটবলার। এদের মধ্যে আবার কয়েকজন এমনও রয়েছেন যারা নিজেদের পজিশনে বিশ্বসেরা। একই সঙ্গে তাদের মূল্যমানও অনেক বেশি।
সর্বশেষ ক্যাটাগরি হচ্ছে, যাদেরকে রিয়াল মাদ্রিদ চিহ্নিত করে, ফ্রাঞ্চাইজি প্লেয়ার হিসেবে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মাদ্রিদ ছাড়ার পর থেকেই এই ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবলারের অভাবে ভুগছে রিয়াল।
Advertisement
রিয়াল মাদ্রিদে এখন রয়েছেন এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার গ্যারেথ বেল। যাকে ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবলার বলা যায় না। এমনকি ইডেন হ্যাজার্ডও পারেন না ফ্রাঞ্চাইজ ফুটবলারের যোগ্যতা অর্জন করতে। তারা দু’জনই হলেন পেনাল্টিমেট ক্যাটাগরির। বেল যে অবস্থায় আছে, তাতে তাকে রোনালদোর সমপর্যায়ের কেউ ভাবতেই পারে না। এমনকি রোনালদোর সাফল্যের ধারেকাছেও নেই বেল।
সুতরাং, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে- নেইমার নাকি এমবাপে? কার দিকে দৃষ্টি দেবে রিয়াল মাদ্রিদ? সম্প্রতি নেইমার বনাম এমবাপে প্রশ্নটা খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এই আলোচনা এবং বিতর্কে কিন্তু এখন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের চেয়ে ঢের এগিয়ে রয়েছেন ২০ বছর বয়সী ফরাসি তারকা কাইলিয়ান এমবাপে।
তবে এখানে একটা সমস্যা তো রয়েছেই। যদি দুই ফুটবলারই একসঙ্গে পিএসজি ছেড়ে যায়, তখন বিষয়টা খুব সহজভাবে নেবে না ক্লাবটির মালিক কর্তৃপক্ষ কাতারের আমির নাসের আল খেলাইফি। যিনি এমন এক ব্যাক্তি, যারা মুখের কথাই ক্লাবের শেষ কথা।
গত তিনটি মৌসুম রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সময় ব্যয় করেছেন নেইমার এবং তার বাবার পেছনে। যদিও গত কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, আগামী মৌসুমে নেইমার পিএসজি ছাড়তে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে নেইমার এবং রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে কোনো যোগাযোগই হয়নি। যদিও পিএসজি ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তারা ফিফার স্মরণাপন্নও হতে পারে উল্টো-পাল্টা কিছু দেখলে।
কিন্তু নেইমারকে হঠাৎই আগ্রহের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিয়েছে দুটি ইনজুরি। গত এক বছরের মধ্যে দুটি বড় ইনজুরি নেইমারের অনেক সম্ভাবনা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তার বয়সও এখন ২৭। এই বয়সের একজন ফুটবলারের চেয়ে রিয়ালের সামনে কম বয়সী সম্ভাবনাময়ী একজন ফুটবলারই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
রিয়াল মাদ্রিদে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের আশপাশে যারা থাকেন, তারাও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, নেইমারের চেয়ে এমবাপে অনেক বেশি তরুণ, অনেক সিরিয়াস, উচ্চাভিলাসি এবং অনেক পেশাদার। সুতরাং, আগামী মৌসুমে এমবাপের জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করতেই পারে রিয়াল মাদ্রিদ। দেখা যাচ্ছে, এসব যুক্তির কাছে পরাজিত হয়েছেন পেরেজও।
শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, নেইমারও থেকে যাচ্ছেন পিএসজিতে। তার বর্তমান যে অবস্থান, তাতে যদি তিনি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে পিএসজি ছাড়ার আর কোনো প্রয়োজন নেই তার। পাঁচ বছরের জন্য রিয়ালের সঙ্গে কোচ হিসেবে যোগ দেয়া জিনেদিন জিদানও চান কাইলিয়ান এমবাপেকে এনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জায়গাটা পূরণ করার।
সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে, মাদ্রিদে এখন নেইমারের চেয়ে বেশি কদর কাইলিয়ান এমবাপেরই। আগামী মৌসুমে তাকে বার্নাব্যুতে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আইএইচএস/জেআইএম