অবশেষে চলে গেলো শিশু সাদমান কেসপার। রোববার বিকেল সোয়া চারটায় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) টানা ৬০ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত মারা যায় শিশুটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএম্ইউ) শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল হক জাগো নিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বিএসএমএমইউতে কেসপারের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পাঁচ ঘণ্টা পর থেকে কেসপারের ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে তার মস্তিস্ক অচল হয়ে পড়ে। পরে বিএসএমএমইউ থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তবে প্রাণপণ চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হলোনা।শিশু কেসপারের মৃত্যুতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে শোকের ছায়া নেমে আসে। কেসপারের বাবা মা, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। শুধু পরিচিতজনরাই নন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশু কেসপারের নিষ্পাস মুখখানি দেখে তার সুস্থতা কামনায় ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুণছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলকে কাঁদিয়ে পরবাসে পাড়ি জমালো কেসপার।সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কেসপারের বাবা অপু জানিয়েছিলেন, গত দুই সপ্তাহ আগে থেকে হঠাৎ করে কেসপারের পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াতে থাকেন তিনি। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় গত ১৯ আগস্ট তাকে চট্টগ্রামের রয়েল হাসপাতালের শিশুসার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাফরুল হান্নানের অধীনে ভর্তি করান। ২৫ আগস্ট তার পেটে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও কোথা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা নির্নয় করা যায় নি। অস্ত্রোপচারের পর ৩৬ ঘণ্টা তার রক্তপাত বন্ধ থাকলেও আবার রক্তপাত শুরু হয়।পরবর্তীতে তাকে বিএসএমএমইউর শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিশু সাদমান কেসপারকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।ক্যাসপারকে ঢাকায় আনার ব্যাপারে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানের পিএস আমিনুল ইসলাম পলাশ। রোববার বিকেলে কেসপারেরর মৃত্যুর পর তিনি ফেসবুকে লিখেন, ক্যাসপার যার কথা আমি এর আগে আপনারদের কে বলেছিলাম, ও আনুমানিক ৪.৫০ মিনিটে এই নির্দয় পৃথিবীর মায়া ছেড়ে সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেছে। আমার সমস্ত চেষ্টাকে বৃথা প্রমাণ করে ও চলেগেল!! সবাই ক্যাসপারের জন্য দোয়া করবেন, মহান আল্লাহ্ ওকে বেহেস্ত দান করুন আমিন। নিজেকে বড় বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। ওর জন্য বুকের ভিতরে একটা ক্ষতচিহ্ন থেকে যাবে সারা জীবন।’এমইউ/এএইচ/আরআইপি
Advertisement