দেশজুড়ে

শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠছে মাছ ও জলজ প্রাণী

গত কয়েকদিন ধরেই শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠছে বিভিন্ন জাতের মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। স্থানীয় মানুষ ও জেলেদের মধ্যে এতে সাময়িক আনন্দ হলেও ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায়ও রয়েছেন তারা। তাদের অভিযোগ, শীতলক্ষ্যা হঠাৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ায় মাছ আর বিষাক্ত পানিতে থাকতে পারছে না। যে হারে গত কয়েকদিন ধরে মাছ ধরা পড়েছে তাতে আগামী কয়েকমাসে মৎস্য শূন্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে শীতলক্ষ্যার একটি অংশে।

Advertisement

দেশের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে স্বচ্ছ পানির কারণে শীতলক্ষ্যার পরিচিতি সবার আগে। গাজীপুর জেলার টোক নামক স্থান থেকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র থেকে এ নদীর উৎপত্তি। পরে জেলার বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবাহিত হয়েছে। সর্পিলাকার এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৮ কিলোমিটার।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন কারখানার শিল্প বর্জ্য সুতিয়া নদীর মাধ্যমে শ্রীপুরে প্রবেশ করেছে কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর এলাকায়। পরে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার ত্রিমোহনী এলাকায় গিয়ে শিল্প বর্জ্য প্রবেশ করেছে শীতলক্ষ্যায়। আর এতেই নদীটির পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। বিপর্যয়ে পড়েছে নদীটির জলজ পরিবেশ।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার জানান, শান্ত নদী হিসেবে শীতলক্ষ্যার পরিচিতি গাজীপুর জুড়েই। নদীটিকে কেন্দ্র করেই শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে শীতলক্ষ্যায় দেশীয় মাছের অবাধ ভান্ডার রয়েছে। কিন্তু বর্ষার পর একদিকে নদীটির পানি কমে যাওয়া অন্যদিকে উজান থেকে শিল্প বর্জ্য নদীটিতে প্রবেশ করায় গত কয়েকদিন ধরে নদীটির শ্রীপুরের বরমী ও বরামা এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে।

Advertisement

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নদীটিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন সুরেশ সাহা। তিনি জানান, শীতলক্ষ্যায় ছিল চিংড়ি, বাউশ, বাইম, রিটা মাছের অবাধ ভান্ডার। এছাড়াও নদীটিতে পাওয়া যেত প্রচুর বিপন্ন প্রজাতির মাছও। আমরা শীতলক্ষ্যার মাছ ধরেই সংসার চালাতাম কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ ভেসে উঠছে। শত শত লোক প্রতিদিনই মাছ ধরছে। ভয় হচ্ছে এভাবে চললে একসময় মাছ শূন্য হয়ে পড়বে নদীটি।

অপর জেলে অমল সাহা জানান, শান্ত এই নদীটি গত মাস পর্যন্তও ভালো ছিল। হঠাৎ কেমিক্যাল যুক্ত পানি প্রবেশ করায় জলজ প্রাণীগুলো অশান্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মাছ ভেসে ওঠার পাশাপাশি লাফিয়ে ডাঙায় ওঠারও খবর পাওয়া গেছে।

বরমীর কুড়িয়াদী গ্রামের ইব্রাহীম খলিল জানান, শীতলক্ষ্যা নদীটি আমাদের গাজীপুরের ঐতিহ্য। নদীটির গাজীপুর অংশ তেমন দখলের কবলে না পড়লেও দূষণে এখন অস্তিত্ম সঙ্কটে পড়েছে। নদীর পানি কালো রঙ ধারণের পাশাপাশি তীব্র দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মনির হোসেন বলেন, শীতলক্ষ্যার পানি দূষণের কারণে জলজ প্রাণী হুমকিতে পড়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি টিকিয়ে নদীটিকে রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

Advertisement

শ্রীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদিউজ্জামান জানান, শিল্প বর্জ্যের সঙ্গে নানা ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি নদীতে প্রবেশ করায় নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেভাবে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে তাতে এই পরিবেশে জলজপ্রাণী বসবাস অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। বিষয়টি আমরা পরিবেশ অধিদফতরকে অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম জানান, উজান থেকে নেমে আসা শিল্প বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা দূষণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। নদী দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিহাব খান/এফএ/পিআর