১৫ মার্চ, শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য শোক ও বেদনার। এ দিন কট্টর মুসলিম ও অভিবাসী বিদ্বেষী রক্তপিপাসু শেতাঙ্গ বর্ণবাদী ২৮ বছরের ব্রেন্টন ট্যারেন্টের হাতে অন্যায়ভাবে রক্তে রঞ্জিত হয় ৫০ জন নিরীহ মুসলমান।
Advertisement
এদের মধ্যে অনেকেই অন্য মুসলিমের নিরাপত্তায় নিজেদের জীবনও বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও এ শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। তাদেরই একজন পাকিস্তানের নাঈম রশিদের স্ত্রী।
তিনি হারিয়েছেন তার প্রাণপ্রিয় স্বামী ডা. নাঈম রশিদ এবং আশা-ভরসা ও সান্তনার প্রতীক ২১ বছরের টগবগে যুবক পুত্র সন্তান তালহাকে। স্বামী ও সন্তানকে হারিয়েও এ মুসলিম নারী সর্বোচ্চ ধৈর্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজেকে গর্বিত মনে করছেন।
কারণ তার স্বামী ও সন্তান উভয়ে হামলায় আক্রান্ত মানুষকে নিরাপত্তা দিতে গিয়েই মৃত্যুকে আলীঙ্গন করেছেন। তার আবেগঘন বক্তব্য মুসলিম উম্মাহর হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। মানবিকতা ও নৈতিকার প্রতি নিজেদের বিলিয়ে দিতেও উদ্বুদ্ধ করেছে।
Advertisement
শহীদ ডা. নাঈম রশিদের স্ত্রী ও তালহার মা জিও টিভির এক সাক্ষাৎকার দেন। আর তাতেই ওঠে এসেছে এ কথাগুলো। তিনি বলেন, আল-নূর ও লিনউড মসজিদের সন্ত্রাসী হামলায় স্বামী ও পুত্রকে হারিয়ে যেখানে শোকে স্তব্দ হওয়ার কথা, সেখানে আমার এতটুকু আপসোসও নেই।
কারণ আমার স্বামী শহীদ ডা. নাইম রশিদ ও সন্তান শহীদ তলহা খুবই ভালো মানুষ ছিলো। তারা মানুষকে বাঁচাতে গিয়েই শহীদ হয়েছেন। আমার জন্য এটা খুবই গর্বের। আমি এ জন্য দুঃখিত নই।
বরং সন্ত্রাসী ট্যারেন্ট ব্রেন্টনের জন্য দুঃখ হয়। তার অন্তর বিদ্বেষ ও ঘৃণায় ভরপুরক ছিলো। মানুষের প্রতি তার হৃদয়ে কোনো সহানুভূতি ও ভালোবাসা ছিল না। কারণ মানুষের আর্তনাদ ও বাঁচার চেষ্টা তাকে হত্যাযজ্ঞ থেকে বিরত রাখেনি।
কিন্তু আমাদের অন্তরে ভালোবাসা আছে। আমরা মানুষকে ভালোবাসতে জানি। আমার স্বামী ও সন্তানের হৃদয়েও মানুষের প্রতি রয়েছে অদম্য ভালোবাসা। যে ভালোবাসার টানে তারা নিজেদের কথা না ভেবে মানুষের নিরাপত্তা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন বলেও জানা তিনি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে যারা শহীদ হন তারাদের জন্য দু:খ নেই। তারা তো জান্নাতি। দ্বীন তো এটাই কামনা করে। আমি গর্বিত যে তারা শহীদি মৃত্যু লাভ করেছে।
আরও পড়ুন > নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা বলেছে খুনি ও পরিবার
উল্লেখ্য যে, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে কট্টর শেতাঙ্গ বর্ণবাদী ২৮ বছরের ব্রেন্টন ট্যারেন্ট এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। সে ছিল কট্টর মুসলমান ও অভিবাসী বিদ্বেষী।
সে দিন নামাজরত মুসল্লিদের ওপর নৃশংস হামলা হয়। এতে ৫০ জন শহীদ হন। এদের মধ্যে পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন ৯ জন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সাক্ষাৎকারটি-
এমএমএস/পিআর