জাতীয়

রাস্তায় গণপরিবহন কম, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে রাজধানীর রাস্তায় গণপরিবহন কম থাকায় চরম ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা। অনেককেই বাধ্য হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, এমনকি হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।

Advertisement

আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী নামে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের (বিইউপি) এক শিক্ষার্থী বাসের চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানীজুড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে তেমন কোনো গণপরিবহন নামছে না। গণপরিবহন না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী।

মোহাম্মদপুর থেকে হেঁটে পল্টনে আসা তানভীর নামে এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, বাসস্ট্যান্ডের পাশে রাস্তায় রজনীগন্ধা, মিডওয়ে, মেসকাত, এটিসিএলসহ সব পরিবহনের বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলেও তারা কোনো বাস আটকাচ্ছে না। শুধু ড্রাইভারদের লাইসেন্স আছে কি না- সেটা জানতে চাচ্ছে। আসলে লাইসেন্স না থাকার কারণে তারা রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, যে কাজটা করার কথা প্রশাসনের তারা সেটা করছে না। তারা তাদের সঠিক কাজটি না করায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বলছে, সামনে রাস্তায় ছাত্ররা গাড়ি ভাঙচুর করছে। বাস ভাঙচুর হতে পারে এই দোহাই দিয়ে ধানমন্ডিতে বাসভর্তি যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হলো। সেখান থেকে বাস ঘুরিয়ে নিয়ে গেল। সামনে এসে দেখলাম, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করলেও তারা কোনো গাড়ি ভাঙচুর করছে না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন কিন্তু কোনো গাড়ি যাতায়াতে বাধা দিচ্ছেন না। তারপরও বাসগুলো না চালিয়ে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।

Advertisement

তবে ভোগান্তি হলেও তা মেনে নিতে চান অনেকেই। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। তারা আর কোনো মানুষের এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু চান না। তাই সাময়িক কষ্ট হলেও মাথা পেতে নেবেন।

ইউসুফ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গণপরিবহন না থাকায় একটু কষ্ট হলেও তা মেনে নিতে রাজি। গণপরিবহন চালিয়ে কী লাভ, যদি সড়কে মানুষের জীবন নিরাপদ না থাকে?’

চিটাগাং রোড থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এক বৃদ্ধা চিকিৎসা শেষে রিকশা, বাস বা অন্য কোনো পরিবহন না পেয়ে হেঁটেই বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি বলেন, ‘এই দেশে আর কত প্রাণ ঝরলে সরকারের হুশ হবে? ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে মৃত্যু কমছে না। আসলে আমরা মেরুদণ্ডহীন, সরকারও তাই। যদি সরকার পাবলিক বাসরে সোজা করতে না পারে তাহলে তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো দরকার নেই।’

এদিকে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন চান পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গণপরিবহন রাস্তায় নামাননি এমনটাই বলছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

বুধবার (২০ মার্চ) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি। এছাড়া রিকশা, মোটরসাইকেল আর প্রাইভেটকারের দখলে ছিল প্রধান সড়কগুলো। মাঝে মধ্যে দেখা মিলছে গণপরিবহনের। দুপুরের দিকে ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব এলাকায় দেখা যায়, রাস্তাজুড়ে চলছে রিকশা। মাঝে মধ্যে চলছে ব্যক্তিগত গাড়ি।

রাজধানীর আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার এলাকার চিত্র একেবারেই বিপরীত। দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, আসাদগেট থেকে আড়ং মোড় পর্যন্ত যানজট। তবে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার রাস্তা ফাঁকা। আবার ফার্মগেটের খামারবাড়ী এবং কারওয়ানবাজার মোড়ে দীর্ঘ যানজট।

অন্যদিকে শাহবাগ, ধানমন্ডির ঝিগাতলাসহ এসব এলাকার বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়ক অবরোধের কারণে গণপরিবহন চলাচল করছে না। অন্যান্য এলাকায় গণপরিবহনসহ অন্য যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর প্রগতি সরণির বসুন্ধারা এলাকায় সু-প্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় বিইউপি’র ছাত্র আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী নিহত হন। এর জেরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তবে বুধবার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক শেষে আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত এই আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।

এফএইচ/এমবিআর/পিআর