দেশজুড়ে

মৌলভীবাজারে মাত্র ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র সেবা দেয়ার উপযোগী

প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস মৌলভীবাজারে। কিন্তু এ জনসংখ্যার বড় একটি অংশ পরিবার পরিবকল্পনার সেবার আওতার বাইরে। জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় খুঁড়িয়ে চলছে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।

Advertisement

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালায় সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও মৌলভীবাজারের ৬৭টি ইউনিয়নের বিপরীতে ৪৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১৩টি কেন্দ্র সেবা দেয়ার জন্য উপযোগী। বাকি ৩০টি কেন্দ্র জরাজীর্ণ অবস্থায় সেবার অনুপযোগী হয়ে আছে। রয়েছে জনবল সংকটও।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, মৌলভীবাজার জেলায় ৩৫ ভাগ পদ খালি থাকায় কোনো কোনো ইউনিটে একজনকে পাঁচ জনের কাজও করতে হচ্ছে। সাধারণত ছয় হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও বেশ কিছু ইউনিয়ন আছে যেখানে মাত্র একজন মাঠকর্মী ইউনিয়নের ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর একটি জনবহুল ইউনিয়ন। এখানে পাঁচ জন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নে ছয় জন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র দুই জন। কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে তিন জন মাঠকমী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। এ চিত্র মোটামুটি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নেরই। শুধু জনবল সংকট নয় আছে ওষুধের সংকটও।

১০ দিনের ওষুধ দিয়ে চলতে হয় এক মাস। প্রতিমাসের জন্য যে ওষুধ জেলাতে দেয়া হয় তা সঠিকভাবে বন্টন করলে ১০ দিন চালানো যাবে না, তাই বাধ্য হয়ে সেইসব ওষুধ দিয়ে এক মাস চালাতে হয়। এতে অনেক এন্টিবায়েটিকের বেলায় ৭টার কোর্সের বেলায় ২/৩টা দিয়ে শেষ করতে হচ্ছে।

Advertisement

এন্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করতে না পারা ভবিষ্যৎয়ের জন্য বড় স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। মেডিসিন বিষেজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, এন্টিবায়েটিকের কোর্স শেষ না করলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে ভবিষ্যতে। যে সমস্যার কারণে এন্টিবায়েটিক খাওয়া হয়েছে সেটা ভবিষ্যতে যেমন আরও বড় হবে তেমনি সেই ওষুধ আর কাজ করবে না।

পরিবার পরিকল্পনার এই অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে পরিসংখ্যানেও। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর জেলা সমন্বয়কারী আলতাফুর রহমান জানান, ২০১৮ সালে মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৭১টি মাতৃ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাদঁনীঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ মুলাইম গ্রামে গিয়ে কথা হয় কয়েজন নারীর সঙ্গে। তাদের একজন আরিফা বেগম জানান, তার সদ্য একটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। ওষুধ পুষ্টিসহ অন্যান্য সেবা না পেলেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।

অন্যদিকে একই এলাকার শাপলা বেগম (২৪) এবং ৪ সন্তানের জননী রিমা বেগম (২৮) জানালেন, তারা নিম্ন আয়ের হওয়ায় পুষ্টিকর খাবারসহ বাচ্চা জন্মদান পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালায় থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদ আলী জানান, পরিবার পরিকলম্পনার মাঠকর্মীরা সময়ে সময়ে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ কেন বাদ যাচ্ছে তা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বলতে পারবে। কারণ ইউনিয়ন অফিসে এ নিয়ে আলাদা কোনো বরাদ্দ আসে না। মৌলভীবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে জানান, ভবন এবং জনবল সংকটে পযাপ্ত সেবা দেয়া যাচ্ছে না। তবে এলাকার মানুষ অন্যান্য এলাকা থেকে গোড়ামী মুক্ত এবং সচেতন হওয়াতে আমাদের কাজ সহজ হচ্ছে। নয়তো জনবল সংকট, মেডিসিন, ভবন সংকটের কারণে তা সম্ভব হতো না। আশা করছি নতুন নিয়োগ হলে শূন্য পদে কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে এবং সমস্যার সমাধান হবে।

Advertisement

এমএএস/পিআর