বর্ণবিদ্বেষী ডানপন্থী মতাদর্শের শেকড় উপড়ে ফেলতে বৈশ্বিক লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন। গত শুক্রবার দেশটির ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বুধবার তিনি এই আহ্বান জানান। ওই হামলার পর প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেসিন্ডা। তিনি বলেছেন, অভিবাসন বৃদ্ধি জাতিগত বিদ্বেষে জ্বালানি জোগাচ্ছে; এমন ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
Advertisement
গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর ও লিনউড মসজিদে আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক নিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত উগ্রপন্থী শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্ট। এতে অন্তত ৫০ জন মুসল্লির প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো কমপক্ষে ২৯ জন। এদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন : শুক্রবারের আজান সম্প্রচার করবে নিউজিল্যান্ডের রেডিও ও টেলিভিশন
এ ঘটনার পর বুধবার সিরীয় দুই শরণার্থী বাবা-ছেলের মরদেহ দাফন করা হয়। ক্রাইস্টচার্চের লিনউড ইসলামিক সেন্টারের পাশের কবরস্থানে তাদের জানাজায় অংশ নেয় শত শত মুসলিম। হামলাকারী শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্টের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
Advertisement
ডানপন্থী জাতীয়তাবাদের উত্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হামলাকারী একজন অস্ট্রেলীয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে যে এ মতাদর্শের মানুষ নেই তা বলা যাবে না। তবে নিউজিল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষ এটাকে ঘৃণা করে। তিনি বলেন, এই আগাছা যেখানে আছে সেখান থেকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা কখনই এমন কোনো পরিবেশ তৈরি করবো না, যেখানে এটির উত্থান ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন : যে কারণে ২ মিনিটের নীরবতা পালন করছে নিউজিল্যান্ড
কিন্তু আমি বিশ্বকে আহ্বান জানাতে চাই যে, নিউজিল্যান্ডে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে তা অন্য একজন আমাদের বিরুদ্ধে ঘটিয়েছে; যে অন্য কোথাও বেড়ে উঠেছে এবং তাদের মতাদর্শ ধারণ করেছে। আমরা যদি নিরাপদ, সহিষ্ণু ও সম্মিলিত বিশ্ব নিশ্চিত করতে চাই তাহলে, এটাকে আমরা সীমানার ভেতরে থেকে চিন্তা করতে পারবো না।
শরণার্থীদের গ্রহণে নিউজিল্যান্ডের অবস্থানের পক্ষে তিনি বলেন, আমরা একটি স্বাগতপ্রবণ দেশ। একই সঙ্গে তিনি হামলাকারীর নাম মুখে আনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জেসিন্ডা বলেন, হামলাকারীর একটি উদ্দেশ্য ছিল, সে কুখ্যাত হতে চেয়েছিল; আমরা তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
Advertisement
আরও পড়ুন : স্বেচ্ছায় অস্ত্র জমা দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা
এর আগে মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে মসজিদে হামলা নিয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে অংশ নিয়ে স্পিকারকে সালাম জানিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন তিনি।
ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর ও লিনউদ মসজিদে প্রাণঘাতী নৃশংসতা চালানো হামলাকারীকে আইনের পুরো সাজা ভোগ করতে হবে বলে জানান তিনি। এমনকি তিনি ঘৃণ্য সেই হামলাকারীর নাম কখনই মুখে নেবেন না বলে জানান।
এসআইএস/এমকেএইচ