বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেলখানার প্রতিটা ইট খুলে ফেলা উচিত।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, অসুস্থ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে, আমরা কীভাবে বসে আছি?
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলছি, জেল খাটছি। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় এক লাখ মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি ২৫ থেকে ২৬ হাজার নেতাকর্মী। গত দুইশ বছরে কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা হয়েছে- এমন কোনো ইতিহাস নেই!
‘ব্রিটিশ আমলে আমরা পরাধীন ছিলাম। ইতিহাস খুলে দেখেন, আমাদের বিরুদ্ধে কয়টা মামলা হয়েছে? কয়জন গুম হয়েছে ৩০০ বছরের ইতিহাসে?’
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত ‘বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি’তে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে এমন মন্তব্য করেন।
Advertisement
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিবরণ দিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি পরাধীন ছিলাম পাকিস্তান আমলে, তখন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছিল? ২৫ লাখ মামলা মনে হয়। যে বাংলাদেশ নিয়ে আমরা গর্ব করি সেই বাংলাকে বিশ্বের কাছে ছোট করে ফেলেছে অবৈধ এ সরকার। সব অর্জন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছে। বিরোধী দলের নেত্রীকে বিনা মামলায়, বিনা অপরাধে জেলে ভরে রেখেছে। বেগম জিয়া যদি দণ্ডিত হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা যারা মেরে বিদেশে পাচার করেছে, যার আমলে এ পাচার হয়েছে তাকে কী বলবেন? হয়তো বিচার হয়নি, মামলা হয়নি কিন্তু পাচার হওয়া টাকার কথা তো পত্রপত্রিকায় এসেছে।’
বিএনপির এ শীর্ষনেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাতের আধারের নির্বাচনে জয়ী হননি। সেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। এ কোন বাংলাদেশ! যার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, তার পরিবারকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন, তার দুটি মাসুম বাচ্চাকে রেখে খালেদা জিয়া জেল খেটেছেন। আজ তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাটে আপনারা চলেন, কী ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতি! এ সরকার একটা ভয়ঙ্কর সরকার, বেগম খালেদা জিয়া অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। শেখ মুজিব তিন বছর এক মাস রাজত্ব করতে পারেননি, নিঃসঙ্গভাবে পুরো পরিবারসহ তিনি নিহত হন। তার প্রতি বিএনপির সহানুভূতি জানিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সহানুভূতি জানানোর কোনো সুযোগ নেই। তিনি ব্যর্থ শাসক। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তিনবার শুধু দেশ পরিচালনা করেননি, ভালোবাসা নিয়ে পরিচালনা করেছেন। জনসমর্থন নিয়ে পরিচালনা করেছেন।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন আবার শুরু হয়েছে। বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা যে আন্দোলন করেছে কিছুদিন আগে, সেই একই দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা আবার আন্দোলনে নেমেছে। আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি। কোনো কোনো জায়গায় গতকাল আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়েছে। পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাব, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করবেন না।’
Advertisement
‘কিছুদিন পর বিএনপিকে বাটি চালান দিয়েও পাওয়া যাবে না’- গতকাল দেয়া আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদের এমন বক্তব্যের জবাবে দুদু বলেন, ‘তোফায়েল ভাই, আপনি এ কথা বলতে পারেন না। ২১ বছর পর যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, শেখ মুজিবের পরিবার প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর; তাহলে এটা নিশ্চিত থাকেন যে বিএনপিও আবার ক্ষমতায় আসবে।’
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আসুন আমরা শপথ নেই, যে যাই বলি না কেন, আসল কথাটা হচ্ছে, লড়াই একটা আমাদের করতে হবে এবং সেজন্য আমরা তৈরি হই।’
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা হাজী মাসুক মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহম্মদ রহমাতুল্লাহ, মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কেএইচ/এমএআর/এমকেএইচ