দেশজুড়ে

জনবল সংকটে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যাহত

প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক শূন্য পদ নিয়েই পরিচালিত হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার গ্রামীণ নারী-পুরুষের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রম। ফলে সেবা পাচ্ছে না প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছে সেবা ইউনিট। এ সেবা ইউনিটের মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মা-শিশু কল্যাণ কেন্দ্র আর উঠান বৈঠক। জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি ৮৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬৩টি ইউনিট পরিচালিত হচ্ছে।

এ কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন ৮৮ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ১০২ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ৫২ জন ফার্মাসিস্ট। আর ইউনিট পর্যায়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক মাঠকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে যাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ৩ মাসে ৮টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক। ওই স্যাটেলাইট ক্লিনিকে এফডব্লিউভি, মাতৃ স্বাস্থ্য, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবাসহ গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়। যার একটি ইউনিটে ১ হাজার ৮০০ সক্ষম দম্পতি সেবা গ্রহণের সুযোগ পান।

এ জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে উপ-পরিচালকের পদসহ মোট ৩২৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে জেলা কার্যালয়ে উপ-পরিচালকসহ ৩টি, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অনুমোদিত ১১টি পদে ৩টি, মেডিকেল অফিসারের ১৭টি পদে ১টি, সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ১১টি পদে ৮টি, সহকারী পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার ১১টি পদে ১১টি, উপজেলা পরিবার কল্যাণ সহকারীর ৩৩টি পদে ১টি, অফিস সহকারী উপজেলার ১১টি পদে ১টি, দাই নার্সের ৯টি পদে ১টি, অফিস সহায়ক ২১টি পদে ৩টি, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ১৩২টি পদে ৩০টি, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ১০৩টি পদে ২টি, পরিবার কল্যাণ সহকারী ৬৩১টি পদে ২৩৭টি, আয়া ১০২টি পদে ২৬টি, টাঙ্গাইল পরিবার পরিকল্পনা আঞ্চলিক পণ্যাগারে সরবরাহ কর্মকর্তার ১টি পদে ১টি ও নৈশপ্রহরী ২টি পদে ১টি পদ শূন্য রয়েছে।

Advertisement

পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের আওতাধীন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ৭০ হাজার মানুষ ও ৪০ হাজার ভোটার সম্বলিত করটিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের গোসাইবাড়ী কুমুল্লীতে ২০০১ সালে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৫ শতাংশ দানকৃত জমির ওপর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকালে নানা অভিযোগ তুলেছেন সেবা গ্রহীতা নারীরা। দায়িত্বরত এক নারী সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫টাকা আদায় করাসহ ওষুধ বিতরণে করছেন নানা অনিয়ম। ২০০৮ সালে ওই ক্লিনিকে যোগদানের পর থেকেই এ নিয়মের ফাঁদে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। যার ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের। এছাড়াও কমিউনিটি ক্লিনিক আর স্যাটেলাইট ক্লিনিক এক ভবনে পরিচালিত হওয়ার ফলে জেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের সঠিক সেবা দেয়া হচ্ছে না।

গোসাইবাড়ী কুমুল্লীর গৃহিণী স্বর্ণার অভিযোগ, গর্ভকালীন অবস্থাতে শারীরিক ওজন আর পেসার পরিমাপে তাকে সহযোগিতা করেননি ওই ক্লিনিকে দায়িত্বরতরা। এ অবস্থাতেও তাকে ৫ টাকা দিয়ে ওষুধ ও চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়েছিল।

ওই গ্রামের নাসিমা, সূর্বণা ও ইয়াসমিন মোল্লাসহ কয়েকজন সেবা গ্রহীতা নারীর অভিযোগ, ওই ক্লিনিকের কর্মরত নাজমুন নাহার নির্ধারিত সময়ে না আসায় স্থানীয় এক দরিদ্র নারীকে দিয়ে ওই ক্লিনিকে সকালে অফিস কক্ষ খোলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার কাজ করান। আমাদের কাছ থেকে নেয়া জনপ্রতি পাঁচ টাকা দিয়ে ওই নারীর বেতন দেন। গ্রামটির অসহায় ও দরিদ্র নারী সেবা গ্রহীতারা সরকার নির্ধারিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।

জনপ্রতি টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে গোসাইবাড়ী কুমুল্লী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নাজমুন নাহার বলেন, অতিরিক্ত কাজের জন্য অতিরিক্ত ব্যক্তির প্রয়োজন ও চাহিদা মেটানোর জন্য রোগী প্রতি টাকা নেয়ার বিধান রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের দেয়া ওষুধ বিতরণের নীতি অনুসরন করেই আমি কাজ করি।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা, আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তির অভিযোগ, ২০০১ সালে ৫ শতাংশ জমিদান করার কারণে জমিদাতার পরিবারকে সারাজীবন ওই ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে গঠিত কমিটির দায়িত্বে রাখা হচ্ছে। গ্রামটিতে তারা ছাড়া কি আর কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নেই? অর্থ লোপাটের জন্য ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এক স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিক আর স্যাটেলাইট ক্লিনিক চালানোর কোনো বিধান নেই বলে নিশ্চিত করেছেন। সরকার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা আর সেবা নিশ্চিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত গ্রামের অদূরে স্যাটেলাইট ক্লিনিক করার শর্তে কার্যক্রমটি চালু করে।

টাঙ্গাইল জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. লুৎফুল কিবরিয়া জানান, ৩২৯টি পদ শূন্য থাকায় জেলায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালনায় চরম সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। জনবল নিয়োগ হলে এ সমস্যা কেটে যাবে। একই স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্যাটেলাইট ক্লিনিক চালানো যাবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

আরএআর/জেআইএম