জাতীয়

জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর আবরারকে চাপা দেয় ঘাতক বাস

সকাল সোয়া ৭টার দিকে বাবার সাথে গাড়িতে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত আসেন আবরার। বিইউপি-তে যাওয়ার জন্য জেব্রা ক্রসিং দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। সাধারণত জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে চলন্ত বাসের গতি নিয়ন্ত্রিত রাখতে হয়। জেব্রা ক্রসিং হয়ে পথচারীরা রাস্তা পারাপার হন। কিন্তু গতি না কমিয়ে আবরারের ওপর সু-প্রভাত বাস উঠিয়ে দেন চালক সিরাজুল ইসলাম। পিচঢালা সড়কে আছড়ে পড়ে স্পটেই মারা যান আবরার।

Advertisement

এ ঘটনার পরপরই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের ছাত্র গোলাম কিবরিয়া।

তিনি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, বাসটি চাপা দিয়ে গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও সামনে যানবাহন থাকায় পারেনি। আবরারকে উদ্ধার না করে পালানোর চেষ্টায় অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা ক্ষেপে যান। তাড়া করে চালক সিরাজুলকে আটক করেন। পরে পুলিশ নিয়ে যায়। অন্যদিকে দ্রুত আবরারকে পাঠানো হয় সিএমএইচে।

তিনি বলেন, জেব্রা ক্রসিং তৈরি করা হয়েছে নিরাপদে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য। অথচ আবরারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে ওই জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর মরতে হলো।

Advertisement

বিইউপি’র ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র মাহির বলেন, আবরার আমার পরিচিত জুনিয়র। ও যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে আরেক শিক্ষার্থীর জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি ছিলাম ৬নং বাসে। বাস ধরার জন্য জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হতে যাচ্ছিল আবরার। নেমেই দেখি রাস্তায় রক্ত, আবরার ছটফট করছে।

মাহির বলেন, এটা খুব কষ্টকর যে, নিরাপদ সড়কের অংশ জেব্রা ক্রসিং। কিন্তু সেই জেব্রা ক্রসিংয়েই অনিরাপদ জীবন। জীবন গেল আবরারের। এত নিয়ম এত প্রতিশ্রুতি কী লাভ হলো। শত চেষ্টায়ও আরবারকে ফেরানো যাবে না। এর দায় কে নেবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর রক্তের দাগ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘিরে রেখেছে ঘটনাস্থল। চারদিক ফিতা দিয়ে মার্কিং করা হয়েছে। যে স্থানটিতে আবরারের মৃত্যু হয়েছে সেখানেই প্রতীকী রক্তমাখা সাদা কাপড়ে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে তিন শিক্ষার্থীকে।

বিইউপি’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জামিল হোসেন চৌধুরী বলেন, ওর (আবরার) ক্লাস ছিল সকাল সাড়ে ৭টায়। বন্ধু নিষাতের অপেক্ষায় ওই এলাকায় অবস্থান করছিল সে। কিন্তু জীবন্ত অবস্থায় আর আবরারকে পায়নি নিষাত।

Advertisement

তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করছি, আমরা রাস্তা অবরোধ করছি। এসবের কোনো কিছুই প্রয়োজন ছিল না। ক্লাসে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আবরার কবরে, আমরা সড়কে। আর কোনো আবরারের মৃত্যু আমরা চাই না।

অনিক হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, জেব্রা ক্রসিংয়ে বাস চাপার ঘটনা মার্ডার। এটা কোনোভাবে দুর্ঘটনা বলার সুযোগ নেই। এর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবে আজ যদি সেখানে ফুটওভার ব্রিজ থাকতো তাহলে হয়তো আবরারকে মরতে হতো না।

জেইউ/এমবিআর/আরআইপি