জাতীয়

রঙিন ক্যাম্পাসে রওনা দিয়ে আবরারের ঠাঁই হলো অন্ধকার কবরে

রঙিন স্বপ্ন আর বুকভরা আশা নিয়ে অন্য দশ দিনের মতো আজ সকালেও প্রিয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন ২০ বছরের টগবগে যুবক আবরার আহম্মেদ চৌধুরী। কিন্তু বিধিবাম! আজকে আর ক্যাম্পাসে পৌঁছাতেই পারলেন না। পথিমধ্যেই সু-প্রভাত পরিবহনের ঘাতক বাস তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

Advertisement

শুধু আজই নয় আর কোনো দিনই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) প্রিয় ক্যাম্পাসে পদধূলি পড়বে না আবরার আহমেদ চৌধুরীর। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রঙিন ক্যাম্পাসের পরিবর্তে তার ঠাঁই হলো অন্ধকার কবরে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে বনানী কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

সহপাঠীদের সঙ্গে আবরার আহম্মেদ চৌধুরী, ছবি- আবরারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেয়া

আরও পড়ুন> তাহলে আমরা মরছি কেন?

Advertisement

এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে মিরপুর সেনানিবাসের মধ্যে বিইউপি এডিবি গ্রেড গ্রাউন্ড মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আবরার আহম্মেদের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহম্মেদ চৌধুরী, বিইউপির ভিসি মেজর জেনারেল মো. এমদাদ-উল বারী, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আবরার আহম্মেদের সহপাঠী, বন্ধু, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আত্মীয়-স্বজন অংশ নেন।

নিহত আবরার আহম্মেদ চৌধুরী বিইউপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ-২০১৯ এর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহম্মেদ চৌধুরী ও ফরিদা ফাতেমী দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।

আরও পড়ুন> আন্দোলনে নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থীরাও

সহপাঠীরা জানান, ক্লাসে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নর্দায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে বিইউপির বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় সু-প্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আবরার

বিইউপির একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আবরার খুব শান্ত ও অমায়িক স্বভাবের ছিলেন। সহপাঠীদের সবার সঙ্গেই তার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। কখনও কোনো ঝামেলায় জড়াননি। পড়াশোনায়ও বেশ ভালো ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন> বাস পোড়ানোর চেষ্টাকারীদের প্রতিহত করলো বিইউপি শিক্ষার্থীরা

এদিকে আবরারের নিহতের ঘটনায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা আট দফা দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরে সঙ্গে নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, ইনডিপেনডেন্ট ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন।

ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আবরার

আবরার আহম্মেদ চৌধুরীর ঘাতক বাস ও চালককে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে মেয়রের আশ্বাসে সাড়া দেননি আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন> চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আবরার

শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ঘাতক বাসচালকের শাস্তি, নতুন বাসচালকদের যথাযথ নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবহার, জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন, প্রগতি সরণির সামনে আবরার আহম্মেদ চৌধুরীর নামে পদচারী সেতু স্থাপন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে প্রগতি সরণিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এমইউএইচ/আরএস/এমএস