বিনোদন

একসময়ের ব্যস্ত অভিনেতা এখন পরের বাড়ির দারোয়ান

ভাগ্য মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় কে জানে! একসময়ের পর্দা কাঁপানো সিনেমার নায়িকা ছিলেন বনশ্রী। ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ‘সোহরাব রুস্তম’ সিনেমা দিয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। সেই নায়িকাকে হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করা হলো শাহবাগে ফুল বিক্রেতা হিসেবে।

Advertisement

যার ছিল বাড়ি, গাড়ি আর রঙিন বিলাসী জীবন, সেই অভিনেত্রী রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ফুল বিক্রি করে দু’ মুঠো ভাতের জোগাড় করছেন। করুণ সেই ঘটনা নাড়া দিয়েছিল বাংলা সিনেমার দর্শকদের, সিনেমাপাড়ার মানুষদের।

এমন নজির শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরও বেশকিছু দেশেই পাওয়া গেছে। সম্প্রতি খোঁজ মিললো ভারতের এক অভিনেতার, যিনি বনশ্রীর মতোই নির্মম ভাগ্যের শিকার।

পেটের ভাত জোগাতে একটি অ্যাপার্টমেন্টে টানা ১২ ঘণ্টার নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। সেই অভিনেতার নাম সাভি সিধু। একসময় ‘গুলাল’, ‘পাতিয়ালা হাউস’, ‘বেয়াকুফিয়া’সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। আজ ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসে সিনেমা দেখা তো দূরের কথা, পেটের ভাত জোগাতে আজ তিনি পরের বাড়ির দারোয়ান।

Advertisement

এই খবর প্রকাশের পর ভারতীয় গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে সাড়া পড়ে গেছে। সংবাদে উঠে এসেছে সাভি সিধুর অভিনয় জীবনের শুরুটা হয়েছিল চণ্ডীগড় থেকে। লখনৌতে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে চণ্ডীগড়ে গ্র্যাজুয়েশন করতে করতে মডেলিংয়ের অফার আসে সিধুর কাছে।

পরে ফের আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে আবারও লখনৌতে ফিরে যান তিনি। সাভি জানিয়েছিলেন অভিনয়ের ইচ্ছা তার ছোট থেকেই ছিল। তার ভাই এয়ার ইন্ডিয়াতে চাকরি পেতেই সাভি সিধুর মুম্বাইতে আসা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

মুম্বাই এসে মডেল ও অভিনেতা হতে স্ট্রাগল করা শুরু করেন সাভি। প্রথমে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের ‘পাঁচ’ ছবিতে অভিনয় করেন। যদিও সেই ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরে ফের পরিচালক তাকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ ছবিতে কাজ দেন।

সেই ছবিতে কমিশনার শর্মার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেন সাভি। পরে ‘গুলাল’ ছবিতেও কাজ করেন তিনি। পরবর্তীকালে ‘যশ রাজ ফিল্মস’র ছবিতে, সুভাষ ঘাইয়ের ছবিতে এমনকি নিখিল আডবাণীর ‘পাতিয়ালা হাউস’ ছবিতেও কাজ করেন সাভি সিধু।

Advertisement

ক্রমেই তিনি ব্যস্ত হয়ে উঠেন সিনেমার অভিনয়ে। পরিচিত, অর্থ; সবই আসতে থাকে। তবে হঠাৎ করেই কী এমন হলো যা পরিস্থিতি এত পাল্টে দিলো?

ভারতীয় গণমাধ্যমে নিজেই সেই কথা জানালেন সাভি সিধু। তার ভাষ্য, তিনি যে বলিউডে কাজ পাননি তেমনটা নয়। ভালো কাজ করছিলেন এবং অনেক প্রস্তাবও পাচ্ছিলেন সিনেমার। কিন্তু হঠাৎ দূরারোগ্য অসুখের শিকার হন তিনি। বাধ্য হয়ে তাকে কাজ ছাড়তে হয়।

কাজ ছাড়ার পর সাভির জীবনে অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি আরও জঘন্য হয়ে আসে তার স্ত্রীকে হারানোর পর। পরবর্তীকালে মা ও বাবা দুজনকেই হারান সাভি।

ধীরে ধীরে আরও একা হয়ে যান এই প্রতিভাবান অভিনেতা। একটা সময় তাকে জীবনের তাগিদে স্বপ্নের শোবিজের বাইরে গিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়। তাকে নামতে হয় কাজের সন্ধানে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ পান। বর্তমানে সেখানেই রোজ ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করেন সিধু।

হাজার কোটি টাকার বাজার বলিউড। সেখানে একজন প্রতিভাবান অভিনেতার জীবনের এমন করুণ পরিণতি সত্যি বিস্মিত। তবে অনেকেই মনে করছেন, সিধুর আজকের পরিস্থিতির খবর কানে পৌঁছালে হয়তো অনেকেই এগিয়ে আসবেন তার পাশে। দেখা যাক, সেই ভাবনার পালে সিধুর জন্য কতোটা সুবাতাস দোলা দেয়।

এলএ/এমএস