গোয়েন্দা রিপোর্টকে বঙ্গবন্ধু মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার কিসিঞ্জার ইয়াহিয়াকে বলেছিলেন, এতো বড় মিলিটারি হয়ে কীভাবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিলে? জবাবে ইয়াহিয়া বলেছিলেন, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে। এতে বলা হয়েছিল, বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু সেই গোয়েন্দা রিপোর্টকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে ভোট দিয়েছিল তার মাধ্যমে। সেখানে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আজকে কেন শুনতে হয়, আমাদের ভোটাধিকার নেই, কেন আমাদের জিম্মি হতে হয়? এগুলোর আমরা পরির্বতন আনতে চাই বলে উল্লেখ করেন ড. কামাল।
সোমবার সন্ধায় গণফোরাম আয়োজিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা চেয়েছিলেন সেটি লিখিত দলিল হিসেবে জাদুঘরে আছে। আমরা তার কাজটা সমাপ্ত করতে চাই। এ দেশে নির্ভেজাল গণতন্ত্র হবে আমরা কী সেই ভূমিকা রাখতে পারছি? এককভাবে নয় সম্মিলিতভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে সংযুক্ত করতে হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, যারা এদেশে গণতন্ত্র চলতে দেয় না, যারা সমাজে বাধা সৃষ্টি করবে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়েছিল বাঙালির ঐক্যের কারণে। এখন যারা মুখে বঙ্গবন্ধু আর কাজে উল্টা-পাল্টা, তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
ঐক্যফ্রন্টের এ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কথার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাব না। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই, তাহলে আমরা সবাই শপথ নেব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেব। কারণ, জনগণের স্বপ্নই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।
ড. কামাল বলেন, আজকের দিনে সব থেকে বড় কাজ হলো, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। এখনো বঙ্গবন্ধুর যেসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি, সেটা করতে প্রত্যেকের শপথ নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে স্বপ্ন সেটাই রাষ্ট্রের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু সেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা আছে। যেখানে তিনি স্বাক্ষর করে গেছেন। আপনার জাদুঘরে গেলে সেটি দেখতে পাবেন।
Advertisement
ড. কামাল বলেন, সংবিধানে যে মূলনীতি ও মৌলিক অধিকারের কথা লেখা আছে, তা ছোট আকারে মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পারি। কারণ, রাষ্ট্র হবে গণতন্ত্রের। বঙ্গবন্ধু বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন এই গণতন্ত্রের প্রতি। তাহলে আমি বলব, আমাদের দেশে কি ষোলআনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে? অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কি আমাদের দেশে হচ্ছে? হচ্ছে না। এটাই আমাদের কথা।
তিনি বলেন, আমরা কারো সঙ্গে বিতর্কে যাব না। যে স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর, আমরা সেই স্বপ্নের কথাই বলছি। এই গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কম জীবন দেয়া হয়নি। এতো মূল্য দেয়ার পরও কেন আমরা নির্ভেজাল গণতন্ত্র ভোগ করতে পারছি না? মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ অনেক মূল্য দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে জাতীয় পার্টি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণফোরামে যোগ দেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ। পরে তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, অনেক আগেই এখানে যোগদান করা উচিত ছিল। আমি গত ১০ থেকে ১৫ বছর যে দলে ছিলাম, সেই দলটা দেশ ও জাতির যে ক্ষতি করেছে, তা বিশ্লেষণ করলে অনেক কথা হবে। সেগুলো এখন বলতে চাই না। গণফোরামে যোগ দিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন বলেও উল্লেখ করেন সিনিয়র এ আইনজীবী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি মফিজুল ইসলাম কামাল, সুব্রত চৌধুরী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আবু সাইদ, রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।
এফএইচ/এমএসএইচ/এমএস