আমাদের জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন এখন ধ্বংসের সর্বোচ্চ হুমকির সম্মুখীন দাবি করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পটি চালিয়ে যাচ্ছে, এটা তাদের একটা জেদ।
Advertisement
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘ইউনেস্কোর ২০১৭ সনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন নানা কারণে ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে নদী বিনষ্টকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, জলোচ্ছাস, চিংড়ি চাষ ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা, পশু শিকার, গাছকাটা, প্রাণী বিলুপ্তি, নৌ-পথ অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত পোল্ডার ও মাছ শিকার, জনপদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সঙ্কট ও ধ্বংসাত্বক উন্নয়ন ও বন দখল। সর্বশেষ বিষয় ‘ধ্বংসাত্বক উন্নয়ন ও বন দখল' সমস্যাটির মধ্যে রয়েছে, সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের এবং জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ সংশ্লিষ্ট সকল আইন, নীতি ও ঘোষণাকে উপেক্ষা; বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান, ও আর্থিক হিসেবের বিচারে অনেক ক্ষতির দায় মাথায় নিয়ে স্থানীয় ও সারাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার এই বিশাল আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ও কাজ চলমান রেখেছেন।
Advertisement
অথচ বৈজ্ঞানিকভাবে এটি পরিস্কারভাবে প্রমাণিত যে, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে। রামপালের কয়লা থেকে নির্গত পদার্থ বনের মাটি, পানি ও বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করবে এবং পশুপাখি-মাছ-ডলফিন মারা যাবে বা ভেগে যাবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভা এ বছরই (২০১৯) আবার বসবে, যেখানে সুন্দরবন রক্ষায় ২০১৭ সালে দেয়া তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের সরকার কতটুকু কী করেছেন, তার মূল্যায়ন করা হবে। নিয়মানুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থকে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
সুলতানা কামাল জানান, বাপা একটি কপি তাদেরকে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া বর্তমান পর্যায়ে দেশের উদ্বিগ্ন জনমানুষের পক্ষ থেকে ইউনেস্কোর কাছে একটি চিঠিও প্রেরণ করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ সরকারকে রামপাল প্রকল্প বাতিল ও বন রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে, আমাদের সরকার ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে বনের পক্ষে রাখার চেষ্টা করে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকার নির্বিকার হলে তার উপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে বনকে ‘বিপদাপন্ন তালিকাভুক্ত’ করা যেতে পারে।
Advertisement
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ, ভূ-তত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরুল ইমাম, বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য শরীফ জামিল প্রমুখ।
এইউএ/এমএসএইচ/এমএস