দেশজুড়ে

৪২ বছরের ভোগান্তির অবসান

৪২ বছরের ভোগান্তির অবসান ঘটতে যাচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। এই মানুষগুলোকে এতোদিন বাঁশের সাঁকো, নদী সাতরিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। আর কিছু দিন পর তারা চলাচল করবে একটি ব্রিজের ওপর। এ যেন বিশাল স্বপ্ন পূরণের সামিল।ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের নয়ারহাট মধুপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার তিরনই নদের ওপর সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে কষ্ট করে চলাচল করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তিরনই নদ পাড়ের ডাঙ্গী ও মিস্ত্রিপাড়া এলাকার লোকজন জানান, নদের মিস্ত্রি এলাকার পূর্বপাড়ে গুল বস্তি, আগাপাড়া, হিন্দুপাড়া, মধুপুর, দৌগাড়ি, আখানগর, রুহিয়াসহ প্রায় ৪০টি গ্রাম আর পশ্চিম পাশে রয়েছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা হাসপাতাল, স্কুল ও কলেজ, উপজেলা পরিষদ, বড়বাড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অফিস আদালত।তাই পূর্বপাড়ের শিক্ষার্থী ও কৃষকদের বাঁশের সাকোঁ দিয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও হাটে আসতে হয়। আবার পশ্চিমপাড়ের লোকজনকে মালামাল কেনাবেচা করতে এ পাড়ে আসতে হয়। এ সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে পারাপার সম্ভব হলেও কোনো যানবাহন চলাচল করা সম্ভব নয়। এর ফলে এলাকাবাসী তাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারসহ অন্যান্য হাটে নিয়ে যেতে অসুবিধার সম্মুখীন হন।এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে অনেকটা ভীতির মধ্যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান। অনেক সময় যাতায়াতকারী পথচারীরা সাঁকো ভেঙে নিচে পড়ে আহত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার, কৃষি কাজ ও লেখাপড়ার জন্য দু’পাড়ের মানুষকে প্রায় সময়ই নদী পার হতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগা মানুষরা সেতুর অভাবে নানা ভোগান্তিতে পড়েন। বাঁশের সাঁকো যেন পারাপারের একমাত্র ভরসা।এলাকাবাসী জানান, আমরা এ অঞ্চলের অবহেলিত জনগণ। আমরা অনেক দিন ধরে একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখে আসছি কিন্তু আমাদের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই ছিল। আজ আমাদের কাক্ষিত স্বপ্নটি বাস্তব রূপ ধারণ করছে।তারা আরো জানান, বাপ-দাদারা কষ্টে করে গেছে আমরা আরামে যাতায়াত করতে পারবো। আমাদের কষ্ট করে যেতে হবে না আর। আমরা আশা করছি আমাদের কাক্ষিত স্বপ্নটি অতি শিগগিরই পূরণ হবে।কাঁচামাল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, তিরনই নদের উপর বড়বাড়ি ইউনিয়ন ছাড়া অন্য পথে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শহর  যেতে হলে ৯-১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়। তাই তিনি দোকানের মালামাল নিয়ে পানি ঠেলে বা সাঁকোর উপর দিয়ে নদ পার হন। এতে তাঁর অনেক কষ্ট হয়। তিনি বলেন, এইঠে একখান ব্রিজ হইলে জীবনটা শান্তি পাইবে।ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের জমির উদ্দিন (৭৪) বলেন, ‘মুই বুঝি আর পুল দেখি যাবা পারিবা নুহু (না)। ভোটের আগত সবায় কহিছিল ক্ষমতায় গেলে প্রথম কাজ হবে এই পুলখান নির্মাণ করা। অবশেষে ব্রিজ হলে হামার (আমাদের) খুব উপকার হবে।মিস্ত্রিপাড়া এলাকার এক প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার স্কুলে শিক্ষার্থীরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিতে পারাপার হয়। স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী বাঁশের সাঁকো পারাপারের ভয়ে অন্য স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেশি কষ্ট হয় বৃষ্টির দিনে। বৃষ্টিতে বাঁশের সাঁকো ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায় ফলে স্লিপ কেটে নিচে পরে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার।বালিয়াঙ্গী উপজেলা নিবার্হী প্রকৌশলী মইনুল ইসলাম জানান, এ সপ্তাহেই ব্রিজের কাজ শুরু করা হবে। ৭২ মিটার এই ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ৮ মাসের মধ্যে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে ঠিকাদারকে।ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল তিরনই নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে। আজ তা বাস্তবায়নের রূপ নিয়েছে। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াতের সুযোগ পাবে।রবিউল এহসান রিপন/এসএস   

Advertisement