রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, রেলওয়ে মন্ত্রণালয় রেলের ভাড়া বাড়ানোর কোনো চিন্তা করেনি। কারণ শুধু যাত্রী ভাড়া দিয়ে রেলওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বহন করা যায় না। তারপরও আমি নিজস্ব আগ্রহের কারণে একটি কমিটি গঠন করেছি। তারা রেলের উন্নয়ন, অবকাঠামো, সেবা বিষয়ে একটি জরিপ চালাবে। এরপর তাদের প্রতিবেদন আমাকে দেবে। আমি সেই প্রতিবেদন নিয়ে রেলের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলব।
Advertisement
সোমবার দুপুরে রেল ভবনে দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্দাই রোটেমর সঙ্গে ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, গঠিত কিমিটি রেলের সেবা, ভাড়া, ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ভাড়ার তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরবে। রেলপথ নিয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা রেলপথ ও পানিপথকে অবজ্ঞা করে রাস্তায় (সড়কপথে) চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো দেশ রেলপথ, পানিপথ, সড়কপথ ও আকাশপথের সমন্বয় ছাড়া উন্নতি করতে পারে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৭৩টি ট্রেন বেসরকারি খাতে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২০ সালে বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের এসব ট্রেন পরিচালনা চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর থেকে আর কোনো ট্রেন বেসরকারি খাতে দেয়া হবে না বলে জানান মন্ত্রী।
Advertisement
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে তার কোনো জমি বা ট্রেন আর কারো কাছে লিজ দেবে না। নতুন করে কোনো লিজ বা চুক্তি নবায়নও করবে না। জনগণের টাকায় সরকার নতুন নতুন লোকোমোটিভ কিনবে, কোচ কিনবে, রেলওয়ের স্থাপনা, লোকবল ব্যবহার করে তারা (লিজ গ্রহিতা ব্যক্তি বা কোম্পানি) চুক্তির শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কেবল টাকা গুনবেন। জনগণের জন্য পড়ে থাকবে ভোগান্তি আর রেলওয়ের জন্য থাকবে বদনাম। এটা আর হতে দেয়া হবে না। রেলকে রেলওয়ের লোককেই চালাতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয়।
রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মন্ত্রী বলেন, কোটি কোটি টাকার ক্রয়চুক্তি হবে আর ম্যানেজমেন্ট দুর্বলতায় সবকিছু যদি বেসরকারি কোম্পানির হাতে দেয়া হয়, তবে কোনো সুফল জনগণ পাবে না।
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সস্তায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে রেলের বিকল্প নেই। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বুলেট ট্রেনের সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। পদ্মা সেতু হয়ে পায়রা বন্দর ও যশোরে রেললাইনের কাজ চলছে। দেশের প্রতিটি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হচ্ছে।
আজকের চুক্তি অনুযায়ী ৬৭৪ কোটি ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮২ টাকায় ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ ইঞ্জিন সরবরাহ করবে হুন্দাই রোটেম কোম্পানি। বর্তমানে রেলওয়ের বহরে কোম্পানিটির ৩৯টি লোকোমোটিভ সচল আছে। নতুন ইঞ্জিনের অর্থ জোগাবে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হুন্দাইয়ের সিইও ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হুইয়ং উক কিম ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মতিন চৌধুরী।
Advertisement
চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইঞ্জিন সরবরাহ করছে হুন্দাই। যাতে চালক ও সহকারীর জন্য ৪টি ক্যাব আসন থাকবে। ইএন ১২৬৬৩ ধরনের শক্তি থাকবে ২ হাজার ২০০ হর্সপাওয়ারের। শীতাতপ যন্ত্রের সক্ষমতা থাকবে ১৫ টন। ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে এই মিটার লোকোমোটিভ।
এমইউএইচ/এমএসএইচ/পিআর