আইন-আদালত

অসুস্থ খালেদাকে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আজ (সোমবার) দিন ধার্য ছিল। তবে অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে মামলার অন্যতম আসামি খালেদা জিয়াকে আজ আদালতে হাজির করা হয়নি।

Advertisement

খালেদাকে হাজির না করে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন ড. মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি কাস্টডি পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। এতে লেখা হয়েছে- শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আজ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজি করা হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, আজ অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তিনি জেলখানায় আছেন। জেল কর্তৃপক্ষ তাকে হাজির করেনি। তার অনুপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন শুনানি হতে পারে।

অপরদিকে খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। এ কারণে তাকে আদালতে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। তার অনুপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি হতে পারে না। এ ছাড়া আমরা মামলার প্রয়োজনীয় কাগজ এখনও পাইনি। তাই আমাদের একটি লম্বা সময় দেয়া হোক।

Advertisement

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালত আগামী ১৭ এপ্রিল অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে আলিয়া মাদরাসা মাঠ আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে ১টা ৫ মিনিটে তাকে আবারও কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওইদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জয়নাল আবেদিন মেজবা ও জিয়াউদ্দিন জিয়া আদালতের কাছে সময় আবেদন করেন। আবেদনে তারা বলেন, আগের শুনানিতে মামলার আলামতসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এখনও সেসব নথি হাতে পাইনি। তাই আমরা শুনানি করতে পারছি না। আমাদের সময় দেয়া হোক।

এ সময় বিচারক সময় আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৮ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেছিলেন।

Advertisement

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেন।

পরে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো। এর তিনদিন পর খালেদা জিয়া ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।

এরপর দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাইকোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং মামলাটি কেন বাতিলের নির্দেশ দেয়া হবে না-এ মর্মে রুল জারি করেন।

মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ৬ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এম কে আনোয়ার, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।

অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি দলীয় সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

জেএ/এনএফ/পিআর