অর্থনীতি

তিন হাজারে শুরু, এখন মজুতই ৩৫ লাখ টাকার পণ্য

আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারীই রক্ষণশীলতার বেড়াজালে আবদ্ধ। কেউ আবার নিরাপত্তার অজুহাতে নিজেকে গুটিয়ে রেখে স্বস্তি পান। এর পেছনে বিভিন্ন ধরনের মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিষয় সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এরপরও নারীরা পিছিয়ে নেই। সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজেদের সাফল্যের শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। এমনই এক নারী যশোরের সালমা ইসলাম।

Advertisement

সময়টা আজ থেকে ২৬ বছর আগে, ১৯৯৩ সালে। বাবা-মার ভিটা ছেড়ে স্বামীর সংসার শুরু করেছেন মাত্র। সংসারে অভাব না থাকলেও নিজ পায়ে দাঁড়াবেন- এমন স্বপ্ন নিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজে নেমে পড়েন সালমা ইসলাম। শুরুতে নিজে সেলাইয়ের কাজের পাশাপাশি অন্যদের প্রশিক্ষণও দিতেন।

পরের অধ্যায় শুধুই সাফল্যগাথা। প্রশিক্ষণের কাজ বাদ দিয়ে ১৯৯৫ সালের দিকে মাত্র তিন হাজার টাকার মতো মূলধন নিয়ে বুটিকসের কাজ শুরু করেন সালম ইসলাম। তখন তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন ৩-৪ জন। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে পরিসর। যশোর শহরে গড়ে তোলেন ‘রকমারী হস্তশিল্প’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

মাত্র ৩-৪ জন সহযোগী নিয়ে কাজ শুরু করা এ নারী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নিয়মিত কাজ করেন সাড়ে তিনশ শ্রমিক। তিন হাজার টাকার মূলধন নিয়ে শুরু করা ‘রকমারী হস্তশিল্পে’ এখন ৩৫ লাখ টাকার পণ্য মজুত আছে।

Advertisement

স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ছোট ব্যবসাকে তিলে তিলে বড় করেন চার সন্তানের এ জননী। তবে ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, বছর ছয় আগে স্বামীহারা হন সালমা। সুখের সংসারে নেমে আসে দুঃখের কালো মেঘ। কিন্তু দমে যাননি উদ্যমী এ উদ্যোক্তা। নিজের হাতে তুলে নেন পুরো সংসারের হাল। তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে হবে- এ স্বপ্ন নিয়ে একাই সামলাতে থাকেন সংসার ও ব্যবসা।

লড়াকু, স্বপ্নবাজ ও সফল এ উদ্যোক্তার সঙ্গে জাগো নিউজের কথা হয় রাজধানী আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সেখানে এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত সপ্তম জাতীয় এসএমই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মেলায় একটি স্টল নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের তৈরি নকশী কাঁথা, বেডশিট, শাড়ি, থ্রিপিস, টুপিস, ওয়ান পিস, কুশন কাভারের বাহারি পসরা সাজিয়েছেন তিনি। সালমা ইসলাম বলেন, পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। আমাদের সংসারে কোনো অভাব ছিল না। এরপরও নিজের পায়ে দাঁড়াব- এ আশায় বিয়ের তিন বছরের মাথায় ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করি। প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে করতে ব্যবসার কথা মাথায় ঢোকে। স্বামীর সহযোগিতায় তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বুটিকসের কাজ শুরু করি।

‘শুরুতে আমার সঙ্গে কাজ করতেন ৩-৪ জন। এরপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আমার ব্যবসা। বর্তমানে আমার সঙ্গে কাজ করছেন ৩৫০ জন। যশোরে যে ঘর (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) আছে সেখানে ৩০-৩৫ লাখ টাকার পণ্য স্টক (মজুত) আছে। এছাড়া বাইরেও অনেক পণ্য আছে।’

Advertisement

‘তবে ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে লোনও নিতে হয়েছে। বর্তমানে লোনের পরিমাণ ১৫ লাখ টাকা’- বলেন সালমা ইসলাম।

ব্যবসার প্রসারে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতেও মেলায় অংশ নেন সফল এ নারী উদ্যোক্তা। জাগো নিউজকে সেসব মেলার অভিজ্ঞতার কথাও জানান তিনি।

সালমা ইসলাম বলেন, আমি কলকতায় তিনবার এবং শিলিগুড়িতে একবার মেলায় অংশ নেই। কলকাতার মানুষের কাছে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে দামের বিষয়ে কলকাতার মানুষ একটু কৃপণ। ওরা বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে চান না।

বাংলাদেশের বিভিন্ন মেলায় অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় এসএমই মেলা এবার নিয়ে সাতবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে আমি এ মেলায় অংশ নিচ্ছে। ঢাকার বাইরে যশোর ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মেলাতেও অংশ নিয়েছি। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, এবারের মেলায় প্রচারণা একটু কম। গত বছর প্রধানমন্ত্রী মেলার উদ্বোধন করেছিলেন। প্রচারণাও বেশ ভালো ছিল। ফলে আমাদের বিক্রিও খুব ভালো হয়।

মেলায় নিয়ে আসা পণ্য সম্পর্কে সালমা বলেন, আমাদের স্টল থেকে ক্রেতারা ৫০০০ থেকে ৮০০০ টাকা দিয়ে নকশী কাঁথা কিনতে পারবেন। নকশী বেডশিট আছে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা দামের। ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে শান্তিপুরী সেলাই শাড়ি। সিল্ক শাড়ি আছে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দামের। থ্রিপিস ও টুপিস পাওয়া যাবে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। ওয়ান পিস আছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা দামের। এছাড়া কুশন কাভার আছে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা দামের।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের শোপিসও তৈরি করি। তবে এবারের মেলায় শোপিস আনা হয়নি। যশোরে যে শোরুম রয়েছে সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনের সুন্দর সুন্দর শোপিস আছে। কেউ চাইলে সেখান থেকে পাইকারি অথবা খুচরা কিনতে পারবেন। এমএএস/এমএআর