দেশজুড়ে

মিষ্টি খেয়ে টাকা না দেয়া সেই ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

দোকান থেকে মিষ্টি খেয়ে টাকা না দেয়া, আটক করে থানায় নিয়ে উৎকোচ আদায়সহ নানা অভিযোগ ওঠা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি মো. শাহিন খানের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

Advertisement

রোববার দুপুরে বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর রহমান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন দোকানিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন এবং তাদের সাক্ষ্য নেন।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ মার্চ জাগো নিউজে ‘মিষ্টি খেয়ে টাকা দেন না ওসি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। পরে ওসি মো. শাহিন খানের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর রহমান ও মেহেন্দিগঞ্জের সার্কেল এএসপি সুকুমার রায়কে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নিরীহ মানুষকে থানায় আটক করে উৎকোচ আদায়, মসজিদের ইমামকে মারধরের চেষ্টা, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় ইগলু আইসক্রিমের ডিলারের ফ্রিজ এনে দীর্ঘদিন ওসির বাসায় রেখে মা ইলিশ সংরক্ষণ, চালের আড়ৎ থেকে বস্তাভর্তি চাল নিয়ে যাওয়া, মুদি দোকান থেকে পেঁয়াজ-রসুন নিয়ে ও মিষ্টির দোকানে মিষ্টি খেয়ে টাকা না দেয়া এবং কাজ করিয়ে শ্রমিকের টাকা না দেয়াসহ নানা অপরাধে জড়িত ওসি মো. শাহিন খান।

Advertisement

এছাড়া বিনা কারণে স্থানীয় চা দোকানি আজম হাওলাদার ও তার ভাইকে মারধরসহ থানায় নিয়ে আটকে রাখা, নাশকতার মামলা দেয়ার কথা বলে টাকা আদায়, সাধারণ ডায়েরি করতে টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ওসি শাহিন খানের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, গত ৬ মার্চ মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট বন্দরের স্বর্ণকারপট্টির আজম হাওলাদারের চা দোকানে চা খেতে যান ওসি শাহিন খান। চায়ের টেবিল অপরিচ্ছন্ন দেখে পরিষ্কার করে দিতে বলেন ওসি। দোকানি আজম কাপড় দিয়ে টেবিল মুছে দেন।

কিন্তু এমন পরিষ্কার ওসির মনমতো হয়নি। দোকানি আজমকে টিস্যু দিয়ে টেবিল মুছে দিতে বলেন ওসি। আজমের দোকানে টিস্যু নেই, তাই টিস্যু কোথায় পাবেন প্রশ্ন রাখেন ওসিকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি শাহিন খান চা দোকানি আজমকে মারধর করেন। আজমকে রক্ষা করতে গেলে তাই ভাই আজাদ হাওলাদারকেও মারধর করেন ওসি। পরে দুই ভাইকে থানায় নিয়ে আটকে রাখেন ওসি। পরে বিষয়টি এমপি পংকজ নাথকে জানানো হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা থানায় থাকার পর এমপির নির্দেশে দুই ভাইকে ছেড়ে দেন ওসি।

পাতারহাট বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, গত অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় ওসি শাহিন খান পাতারহাট বাজারে ইগলু আইসক্রিমের ডিলার মো. বাবলুর দোকানের ফ্রিজ নিজের বাসায় নিয়ে যান। পরে অভিযানে জব্দ হওয়া মা ইলিশ ওসির বাসার ফ্রিজে মজুত করেন। দীর্ঘদিন ফ্রিজ ফেরত না দেয়ায় একপর্যায়ে বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান ডিলার বাবলু। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের চাপে প্রায় চার মাস পর ইগলু আইসক্রিমের ডিলার বাবলু ফ্রিজ ফেরত পান।

Advertisement

এছাড়া পাতারহাট বন্দরের আব্বাসের চালের আড়ৎ থেকে দুই বস্তা চাল নিয়ে যান ওসি শাহিন খান। একই বাজারের সুনীল পালের মুদি দোকান থেকে নিয়ে যান পেঁয়াজ-রসুন। কাপুড়িয়াপট্টির নন্দী বাবুর দোকান থেকে মিষ্টি খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যান ওসি।

দুই মাস আগে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুনসুর আহমদে মারধর করতে উদ্যত হন ওসি শাহিন খান। এ সময় স্থানীয় মুসল্লিরা প্রতিবাদ জানালে অবস্থা বেগতিক দেখে তাৎক্ষণিক প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পার পান তিনি।

জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওসি মো. শাহিন খানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। শাহিন খানের বিরুদ্ধে কয়েকজন ব্যবসায়ী সাক্ষ্য দিয়েছেন। কেউ কেউ ওসি মো. শাহিন খানের বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য করেছেন।

স্থানীয় চা দোকানি আজম হাওলাদার, আজাদ হাওলাদার, পোলার আইক্রিমের ডিলার বাবলু, শ্রীপুরের মঞ্জু মিয়া, মতলেব পালোয়ান জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুর রহমান স্যার আমাদের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা ওসি শাহিন খানের নানা অপকর্মের কথা জানিয়েছি।

মেহেন্দিগঞ্জের সার্কেল এএসপি সুকুমার রায় বলেন, ওসি শাহিন খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের খবর প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট বন্দরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কয়েক জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তবে তদন্ত শেষ করার আগেই কোনো কিছু বলা ঠিক হবে না।

এএসপি সুকুমার রায় আরও বলেন, আমি ছাড়াও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করছেন। এ সপ্তাহের শেষ দিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব আমি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার নাইমুর রহমান বলেন, ওসি শাহিন খানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। রোববার কয়েকজন ব্যবসায়ীর তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শাহিন খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার সম্মুখীন হতে হবে ওসি শাহীন খানকে।

সাইফ আমীন/এএম/জেআইএম