হজ এজেন্সিজ অ্যাসাসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দ্বিবার্ষিক নির্বাচন আগামী ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সোমবার থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। আসন্ন এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাব কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো সরব ও আনন্দমুখর হয়ে উঠছে।
Advertisement
সর্বত্র আলোচনা চলছে, আসন্ন হাবের এ নির্বাচনে মোট কয়টি প্যানেল হচ্ছে, কোন প্যানেলের শীর্ষপদে কে প্রার্থী হচ্ছেন, কোন পদে কে, কার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন, কোন প্রার্থী কেমন, কী কারণে কে কার চেয়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে, কার জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু ইত্যাদি নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে নানা হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য হাবের বর্তমান কমিটির মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমকে একটি প্যানেলের প্রধান হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১২মার্চ রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে হাবের বর্তমান নির্বাহী কমিটি (ইসি) ও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট জোনাল কমিটির বেশির ভাগ সদস্যের উপস্থিতিতে এক ঘরোয়া সভার আয়োজন করা হয়।
ওই সভায় আসন্ন হাব নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ খোলামেলা আলোচনা হয়। সেখানে হাবের বর্তমান সভাপতি আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া তার শারীরিক অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা এবং সম্প্রতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তার পক্ষে হাবে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে বর্তমান মহাসচিব তসলিমকে প্যানেল প্রধান করে নির্বাচনী মাঠে নামার ঘোষণা দেন।
Advertisement
আবদুস ছোবহান ভুঁইয়া নিজে নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলেও প্যানেল প্রধান তসলিমের নেতৃত্বে গঠিত প্যানেলকে বিজয়ী করতে সার্বক্ষণিক প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবেন। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করলে উপস্থিত সকলেই সভাপতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত ও তাকে ধন্যবাদ জানান।
ওই সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হাবের বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হাবের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ, খাজা মঈন উদ্দিন জালালাবাদী, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল আমিন মিন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তাজুল ইসলাম, এস এম ইব্রাহিম, ওয়াহিদুল আলম, অর্থ সচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, চট্টগ্রামের হাব নেতা শাহ আলম, জিয়া উদ্দিন চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ ও কারি গোলাম মোস্তফা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন হাব নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। বিভিন্ন এজেন্সির মালিক ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে আসন্ন হাব নির্বাচনে একটি প্যানেলের প্রধান অর্থাৎ সভাপতি হিসেবে ঘোষিত শাহাদাত হোসেন তসলিম ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ প্রার্থী। তাদের ধারণা তসলিমের সঙ্গে সভাপতি হিসেবে এবার হয়তো কেউ তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশই নেবেন না। আর কেউ অংশ নিলেও তিনি পরাজিত হবেন।
তারা এমনটা কেন বলছেন বা মনে করছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে- বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়। সেই প্রবাদের মতো শাহাদাত হোসেন তসলিম গত দুই বছর হাবের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপালন কালে হাবের ইতিহাসে অন্যতম সফল মহাসচিব হিসেবে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হাবকে আরও অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর সংগঠন হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থেই তাকে সভাপতি হিসেবে দেখতে চান বলে তারা মন্তব্য করেন।
Advertisement
উল্লেখ্য, প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী হাব নির্বাচনে শুধুমাত্র প্যানেল প্রধানেরই (সভাপতি) নাম ঘোষণা করা হয়। তারই নেতৃত্বে অন্যরা সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে বিজয়ীরা পরে মহাসচিব নির্বাচিত করাসহ কেবিনেট গঠন করেন।
হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিমকে কেন সভাপতি পদে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনে করা হচ্ছে সে সম্পর্কে খোঁজ নিতে এজেন্সি মালিক ও ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে হাব মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে তিনি এজেন্সি ও হাজিদের কল্যাণে নানামুখী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও তা বাস্তবায়ন করেছেন। বিভিন্ন সফল কার্যক্রমের তালিকায় রয়েছে- ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করা, কোটা বাণিজ্য, রিপ্লেসমেন্ট বাণিজ্য বন্ধ করা, বিমান ভাড়া ১০ হাজার টাকা কমানো, হাজিদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাতিল, হজযাত্রীদের প্রাক নিবন্ধন সার্ভার সব সময় খোলা রাখা ও সর্বশেষ এজেন্সিপ্রতি হজযাত্রীর সংখ্যা দেড়শ জনের স্থলে ১০০ জন করা। সর্বশেষ হজ কার্যক্রমে নিজে দায়িত্ব নিয়ে সৌদি দূতাবাসে ছুটোছুটি করে হাজিদের ভিসা করিয়ে শেষ ফ্লাইটেও হাজি পাঠিয়ে তবেই নিজে সৌদি আরবে রওনা হওয়ার ঘটনাটিও সর্বমহলে প্রশংসিত হয়।
সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান একাধিকবার গত বছরের হজ কার্য়ক্রম পরিচালনায় হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিমের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এসব কারণে এ বছর তছলিম অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বলে মনে করছেন অনেকে।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক আজ (রোববার) আসন্ন হাব নির্বাচনে একটি প্যানেলের প্রধান হিসেবে ঘোষিত শাহাদাত হোসেন তসলিমের কাছে সভাপতি নির্বাচিত হলে তিনি আর কী কী করতে চান জানতে চাইলে তছলিম জানান, মহাসচিব পদে দায়িত্বপালনকালে তিনি হজ এজেন্সি ও হাজিদের কল্যাণে সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সব ধরনের অন্যায়-অপকর্মের ঘোরবিরোধী ছিলেন।
তিনি সভাপতি নির্বাচিত হলে প্রধানত তিনটি কাজ করতে চান। ইতোমধ্যেই তিনি সৌদি সরকারের সাথে এ তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছেন। এ বিষয় তিনটি হলো- এক. বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের সকল কার্যক্রম সৌদি আরবে না করে বাংলাদেশেই সম্পন্ন করা। ফলে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে হজযাত্রীদের আর বিমানবন্দরে গিয়ে ইমিগ্রেশনের জন্য কষ্ট করতে হবে না। দুই. হজ ও ওমরাহ দু’বার করলে পরের বছর হজযাত্রীদের অতিরিক্ত ২ হাজার রিয়েল পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে ২ হাজার রিয়েল যেন না দিতে হয় সে ব্যপারে আলোচনা চলছে। তিন. এজেন্সির মালিকরা সাধারণত মোনাজ্জেন হয়ে থাকেন। তাদের সৌদি আরবে বাড়িভাড়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে যে স্বল্প মেয়াদে ভিসা দেয়া হয় তাতে তারা কাজ শেষ করতে করতে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে তারা হাজিদের সেবায় মনোযোগ দিতে পারেন না। তাদের ভিসা ছয়মাস করার জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালাবেন। ধর্ম মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ ও সহযোগীতায় হজ কার্যক্রম আরও সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এমইউ/এনএফ/পিআর