পাঁচ বছরের শাস্তির মেয়াদ শেষে সেপ্টেম্বরে আবার সব ধরণের ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। ক্রিকেটে ফিরে আবারো ভক্তদের হৃদয়ে স্থান ফিরে পেতে চান এই পাকিস্তানি তরুণ। নিজের লক্ষ্য এবং ক্যারিয়ার পুনর্জীবিত করতে মাইক আথারটনের সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি ইংলিশ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন আমির। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য আমিরের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল : গত মার্চে আপনি পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছেন এবং সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই আপনার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। আবারো পাকিস্তানের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে আপনি কতটা উত্তেজিত?আমির: আমি দারুন উত্তেজিত। তবে এই মুহূর্তে আমার নজর আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া পাকিস্তানের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। আমি ওই টুর্নামেন্টের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।আপনার অতীত কর্মকান্ডের জন্য পাকিস্তানী সমর্থকরা আপনাকে আগের মত গ্রহণ করবে বলে আপনি মনে করছেন কি-না? অথবা আপনি আপনার শাস্তির মেয়াদ শেষ করেছেন, নতুন শুরু আপনার প্রাপ্য-সব কিছু ভুলে যাওয়া উচিত?আমির: এটা আমার জন্য নতুন শুরু। আমি আমার অতীত ও ভুল থেকে শিক্ষা পেয়েছি। জাতি ও ভক্তদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি এবং এখন আমি আমার দেশ ও ভক্তদের জন্য কিছু দিতে প্রস্তুত। অনেক মানুষ, অনেক ভক্ত, অনেক ক্রিকেটীয় জাতি আমার ভুলের কারণে দুঃখ পেয়েছে। বহুবার আমি ক্ষমা চেয়েছি। পারফরমেন্স দিয়ে আমি আবার ভক্তদের হৃদয় জয় করতে চাই। আমি আবার সমগ্র বিশ্বে ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা ফিরে পেতে চাই।খেলায় ফেরার পর নিজের বোলিংয়ে আপনি সন্তুষ্ট? পাঁচ বছর খেলার বাইরে থাকার পর পুনরায় নিজের জায়গায় ফিরতে পারছেন?আমির: জাতীয় ক্রিকেট একাডেমীতে দৈনন্দিন ভিত্তিতে আমি কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলন করছি। প্রতি দিন আমি দুইটি করে সেশন করছি। একটা হলো জাতীয় দলের প্রশিক্ষকের সঙ্গে প্রতিদিন সকালে দুই ঘন্টা অনুশীলন এবং দ্বিতীয়টা দৈনন্দিন ভিত্তিতে সন্ধ্যায় নেটে আট থেকে দশ ওভার বোলিং করছি। গত পাঁচ বছর আমি ক্রিকেট খেলেনি, এটা দীর্ঘ সময়। আশা করছি, দুই তিন মাসের মধ্যে নিজের ছন্দ ফিরে পাব ইনশাল্লাহ। ফাস্ট বোলিংটা পুরোটাই ছন্দের ব্যাপার। তাই তাড়াতাড়ি ছন্দে ফিরতে কঠোর পরিশ্রম করছি।আবার নতুন করে শুরু করছেন- এমনটা ভাবছেন কিনা?আমির: হ্যাঁ, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী। আমি নিজের ফিটনেস ও অনুশীলনের ওপর নজর দিচ্ছি এবং নিজের ছন্দ ফিরে পেলে আমি উইকেট নেয়া শুরু করব। হয়তোবা কয়েক মাসের আপনারা একই আমিরকে দেখবেন।তাহলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজে নাও ফেরা হতে পারে?আমির: এই মুহূর্তে আমার নজর কেবলমাত্র টি-২০ টুর্নামেন্টে এবং এরপর সেটা প্রথম শ্রেণীর টুর্নামেন্টে। পাকিস্তানের হয়ে খেলাটা পিসিবি এবং নির্বাচকদের ব্যাপার। অতএব আপনাকে তাদের মতামত জানতে হবে।গত পাঁচ বছরে আপনার সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত কি ছিল?আমির: সবচেয়ে খারাপ ও কঠিন মুহূর্ত ছিল পুলিশ যখন আমাকে জেলে নিয়ে যায়। তবে সেটা এখন শেষ এবং আমি আবার ক্রিকেটে ফিরেছি। ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক যেখানেই সুযোগ পাই না কেন নিজেকে বিলিয়ে দিতে আমি প্রস্তুত।কঠিন মুহূর্তগুলোতে কে আপনাকে সাহায্য করেছে?আমির: সব কিছু ঘটার পর ব্যক্তিগত জীবনে আমার পরিবার, বাবা-মা, ভাই-বন্ধু সকলেই সব সময় আমাকে সাহায্য করেছেন। কিছু কিছু ভক্তও আমাকে সমর্থন করেছেন এবং সাহস যুগয়েছেন। আমি আবার ফিরব এবং ভাল পারফরমেন্স করব বলে সমর্থন যুগিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যক্তি আছেন যাদেরকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার আইনজীবী সাজিদা মালিক ও গ্যারেথ পিয়ার্স এবং মাইক আথারটন। আমি যখন খুবই হতাশায় ভুগছিলাম, তখন এই সকল ব্যক্তি আমাকে খুবই সমর্থন যুগিয়েছেন।মাইক আথারটন?আমির: হ্যাঁ, তিনি খুবই সাহায্য করেছেন। আমি যখন জেলে যাই। তখন সিদ্ধান্ত নিই যে আমি আর ক্রিকেট খেলব না। কিন্তু এ তিন ব্যক্তি আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং আত্মবিশ্বাস দিয়েছেন। তাই তাদের কথা শোনার পর আমি আবারো ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নেই।আথারটন আপনাকে কি বলেছিলেন?আমির: জেল থেকে বেড়িয়ে আমি আথারটনকে (স্কাই স্পোর্টেসে) একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম এবং তিনি বলেছিলেন আমি আবারো ক্রিকেটে ফিরব। সে সাক্ষাৎকারকালে তিনি আমার প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল ছিলেন। ইংল্যান্ডের সাবেক একজন অধিনায়কের কাছ থেকে এ ধরনের কথাগুলো আমাকে শতভাগ উজ্জীবিত করেছে।স্পট ফিক্সিংয়ে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর পাকিস্তানে জনগণ আপনাকে কোন চোখে দেখতেন?আমির: কিছু জনগণ খুবই বিস্মিত হয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানে অনেক ক্রিকেটার আমার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর অনুশীলনের জন্য আমি ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমীতে যাওয়া শুরু করলাম এবং ক্রিকেটাররা আমার কাছে এসে বললেন, ‘আমাদের কাছ থেকে তোমার কিছু প্রয়োজন হলে তোমার জন্য আমরা প্রস্তুত।’ আমার সাহায্যে এগিয়ে আসা সকল মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা আপনাকে পুনরায় জাতীয় দলে না ফেরাতে বলেছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?আমির: এটা তার অভিমত। কিন্তু একই সঙ্গে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম এবং শোয়েব আখতারদের কাছ থেকে আমি অনেক সমর্থন পাচ্ছি। রমিজ রাজা আমার বড় ভাইয়ের মত। বড়দের কাছ থেকে আমরা সব সময়ই শিখি। তাদেরও ভিন্ন মত থাকতেই পারে। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারি না। আমি ক্রিকেট খেলার জন্য প্রস্তুত, পাকিস্তানকে কিছু দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আমাকে সব সময় সমর্থন দেয়ার জন্য আমি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে মাইকেল হোল্ডিংয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফের প্রতি আপনার অনুভুতি?আমির: এ বিষয়ে কোন কথা না বলাই ভাল।গত পাঁচ বছরে ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ব্যাটসম্যানরা আক্রমণাত্মক হচ্ছেন, টেস্ট ক্রিকেটে রান রেট অনেক বেড়ে গেছে এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন অনেক বেশি রান হচ্ছে। এর সঙ্গে আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে অথবা নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে কিনা?আমির: পাওয়ার প্লে’র পরিবর্তন হয়েছে এবং অন্য কিছু বিষয়েও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু ক্রিকেটের মূল বিষয়টি ঠিকই আছে। ভাল খেলোয়াড়রা অবস্থা বুঝে তাদের পজিশন মানিয়ে নেন। এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমি প্রস্তুত।দেশের বাইরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে চান?আমির: আমি পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিই নজর দিচ্ছি। তবে সুযোগ পেলে আমি ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে, বিগ ব্যাশ লীগ এবং ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে খেলতে চাই। যতটা সম্ভব আমি নিজকে এক্সপোজ করতে চাই এবং সুযোগ পেলে আমি আবারো পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চাই। ইতোমধ্যেই কিছু প্রস্তাব আমি পেয়েছি।ইংল্যান্ডের কোন কাউন্টি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন?আমির: কিছু আলোচনা চলছে। দেখা যাক কি হয়।আরটি/এমআর
Advertisement