জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। রোববার সকাল ৭টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে তিনি এ শ্রদ্ধা জানান।

Advertisement

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দা‌ঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী চলে গেলে সকলের জন্য জায়গাটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর অওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

আজ ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়রা বেগমের ঘরে জন্ম নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল ও কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন।

১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ২ মেয়ে- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন ছেলে- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।

Advertisement

অল্প বয়স থেকেই তার রাজনৈতিক প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে থাকে। ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ছাত্রসংগঠন নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। কট্টরপন্থী এই সংগঠন ছেড়ে ১৯৪৩ সালে যোগ দেন উদারপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠন বেঙ্গল মুসলিম লীগে। এখানেই সান্নিধ্যে আসেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন রক্ষণশীল কট্টরপন্থী নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্তৃত্ব খর্ব করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।

ভাষা আন্দোলনের সময়ে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিব। ১৯৪৮ সালে ভাষার প্রশ্নে তার নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় যা চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে।

পঞ্চাশের দশক তার রাজনৈতিক উত্থানের কাল। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন দূরদর্শী এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন এক কুশলী রাজনৈতিক নেতা। এ সময় শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দেন এবং হোসেন সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে মিলে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। তিনি দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

Advertisement

১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষিমন্ত্রী হন মুজিব। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।

১৯৬৩ সালে হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিব। তিনি ছিলেন আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র তত্ত্বের কট্টর সমালোচক। ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই ছয় দফা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের রূপরেখা।

১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখানেই উত্থাপিত হয় এগার দফা দাবি যার মধ্যে ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। লাখো মানুষের এই জমায়েতে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ববাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মুজিবের স্বায়ত্বশাসনের নীতির পুরোপুরি বিপক্ষে ছিল।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। ঐতিহাসিক এ ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শৃঙ্খল মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেন, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। ... প্রত্যেকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে”।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালি জাতির এই জাগরণে ভীত ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, নিষিদ্ধ করেন আওয়ামী লীগকে এবং শেখ মুজিবকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।

এরপর আসে ২৫ মার্চ, ১৯৭১। রাতের অন্ধকারে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। পাকবাহিনীর অভিযান শুরু হলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক আন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান জানান।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ সরকারের অধীনেই গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী এবং শুরু হয় পাক সেনাদের প্রতিহত করার পালা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর, ৩০ লক্ষ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে আসে বিজয়।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন তার প্রিয় মাতৃভূমিতে, তার স্বপ্নের স্বাধীন দেশে। ১৯৭৪ সালে তিনি সব রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নিচে আনতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা ‘বাকশাল`। একইসঙ্গে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রথম যে দলটি নিষিদ্ধ করা হয় তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবের নিজের দল।

ফলে দেশে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করে। সমস্ত দেশ যখন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই আসে আরেকটি আঘাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের সদস্যদের। কেবল তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান।

আজ বঙ্গবন্ধু নেই। আছে তার স্বপ্ন, আছে চেতনা। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই লাল-সবুজের পতাকা।

এফএইচএস/এসআর/এমএস