চোখের সামনে ধ্বংসযজ্ঞ, রক্তের বন্যা দেখা যাচ্ছে আবছা আবছা, মিনিট পাঁচেক এদিক-ওদিক হলেই মৃত্যুর মিছিলে থাকতে পারতো তাদেরও নাম- স্বভাবতই আতঙ্ক কাজ করছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমরা।
Advertisement
গতকাল (শুক্রবার) নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূরে হওয়া নারকীয় হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ জন মানুষ, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরেই ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রতিনিধিরা, যারা বাসে বসেই দেখেছেন হামলায় হতাহত মানুষদের ছোটাছুটি।
অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন সবাই, শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি কেউই। কিন্তু মানসিকভাবে? এত বড় হত্যাযজ্ঞ চোখের সামনে ঘটতে দেখার রেশ এতো সহজেই কী মুছে ফেলতে পারবে মস্তিষ্কের নিউরন সেলগুলো? নিউজিল্যান্ড থেকে চলে এলেই সবকিছু ভুলে যেতে পারবেন মিরাজ, তাইজুল, সৌম্যরা?
আজ (শনিবার) জরুরী ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তামিম জানিয়েছেন, এই ঘটনার রেশ কাটাতে সময় লাগবে অনেক। যা দেখে এলেন 'শান্তিপূর্ণ' নিউজিল্যান্ডে সে ভয়, আতঙ্ক ছাপিয়ে স্বাভাবিক হওয়া খুব একটা সহজ হবে না।
Advertisement
তবে তামিমদের অগ্রজ, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনের বিশ্বাস, অনুজরা দ্রুতই মানসিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
নিজে দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেছেন, সাক্ষী হয়েছেন দেশ-বিদেশে নানান ঘটনার। খেলা ছাড়ার পরে যুক্ত হয়েছেন খেলোয়াড় গড়ার কাজে, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন উঠতি-তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে, বিপিএলে সামনে থেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বসেরা তারকাদেরও- এ অভিজ্ঞতা থেকেই সুজন মনে করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ঘুরে দাঁড়াবেন শীঘ্রই।
আজ সংবাদমাধ্যমে সুজন বলেন, ‘আমার মনে হয় ছেলেরা যথেষ্ট পরিণত। সবাই আসলে বড় হয়ে গিয়েছে। আর এটি তো এমন না যে বিশ্বে প্রথম ঘটলো। এমন কিন্তু অহরহ ঘটছে। বাংলাদেশে ঘটেছে। আমরা হলি আর্টিজানের ঘটনা জানি কতটা নৃশংস হয়েছিলো। আমার মনে হয় অবশ্যই একটা শক তো পেয়েছে ছেলেরা।’
‘তবে আমার কাছে মনে হয় এখান থেকে তারা দ্রুত ফিরে আসবে। আমার মতে এত চিন্তা করার কিছু নেই। তারা সবাই পরিণত হয়েছে। বুঝেছে যে এমন ঘটনা হতেই পারে, হয়েছে। সুতরাং দুই একদিনের মধ্যে ওরা নিজেরাই ঠিক হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
Advertisement
বর্তমানে আবাহনী লিমিটেডের কোচের দায়িত্বে থাকা সুজন আরও জানান ঘটনার পরপরই নিউজিল্যান্ডে থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা হয়েছে তার।
সুজনের ভাষ্যে, ‘আমার সাথে সাথেই কথা হয় সবার সাথে। রিয়াদ, তামিম, তাইজুল, পাইলটের সাথে কথা হয় তখনই যখন ওরা বেশ ভীত, বাস থেকে নামার পরেই আমাকে ওরা ফোন করেছিলো। তখন কাউকে পাচ্ছিলো না, সকাল ছিলো অনেক। আমার সঙ্গে তখনই কথা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁদের কণ্ঠ শুনেই বুঝেছি কতটা ভীত তারা। স্বাভাবিকভাবেই আপনি যদি চোখের সামনে এমন কিছু দেখেন এবং আপনি জানেন যে যদি এক মিনিট পরে ঘটনাটি ঘটতো তাহলে কিছু হতে পারতো। স্বাভাবিকভাবেই ভীতবিহ্বল থাকার কথা। খেলতে গিয়ে এমন একটি ঘটনা দেখা- অবশ্যই ভালো কিছু না।’
এআরবি/এসএএস/এমএমআর/এমকেএইচ