দেশজুড়ে

তিনি হাত পাতেন না

যে হাত দুটি হয়তো হতে পারতো ভিক্ষুকের হাত। সে দুটি হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করেছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মজুমদারপাড়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আলতাফ হোসেন (৬০)। জীবিকার তাগিদে শৈলকুপা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের ব্রিজের এক প্রান্তে বসে পাখা ও ঝাড়ু বিক্রি করেন তিনি। ঝড়, বৃষ্টি ও খরতাপের সঙ্গে সংগ্রাম করে এ ব্রিজের ওপর বসে পাখা ও ঝাড়ু বিক্রি করে আসছেন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানেই অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকা কিংবা আত্মসম্মানবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামা-এটি মানতে নারাজ তিনি। তাই আত্মপ্রত্যয়ী আলতাফ হোসেন রোজগারের জন্য বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের কুমার নদের এ ব্রিজটিকে বেছে নিয়েছিলেন। প্রতিদিন সকালে আসেন আর ফেরেন সন্ধ্যায়। পাখা বিক্রির সামান্য আয়ে স্ত্রী সন্তানদের মুখে তিন বেলা পেটভরে খাবার তুলে দিতে না পারলেও আত্মমর্যাাদার সঙ্গে বেঁচে আছি বলে জানান অন্ধ আলতাফ হোসেন। আলতাফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, কুড়ি বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত  হন তিনি । সেসময় দরিদ্র বাবা-মা তাকে ভালো চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। দীর্ঘদিন ওই জ্বরে ভোগার পর এক সময় সেরে উঠেন। কিন্তু হারিয়ে ফেলেন দৃষ্টি শক্তি। আলতাফ হোসেনের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার বড় মেয়ে শাহিনুর (১৮) ঝিনাইদহ শহরের মল্লিক কারিগরী কলেজে পড়েন। ছেলে বাপ্পি (১৭) এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় পরের দোকানে কাজ শুরু করেছে। ছোট মেয়ে তাজমীন শৈলকুপা পাইলট গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আলতাফ জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৫/২০টি পাখা ও ৪/৫টি ঝাড়ু বিক্রি হয়। প্রতিটি পাখা ১৫ থেকে ৩০ টাকায় ও ঝাড়ু ২০-৩০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে তার দিনে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা আয় হয়। আলতাফ হোসেনের সাত শতাংশের বসত ভিটায় একটি দোচালা ঘর আছে। আবাদি কোনো জায়গা জমি নেই। তাই পাখা বিক্রির আয় দিয়েই তাকে পরিবারের সদস্যদের ভরন-পোষণ ও পড়াশুনার ব্যয়ভার মেটাতে হয়। অন্ধ আলতাফ হোসেনের পাশে আতাউর রহমান(৩৮) নামের এক শিক্ষিত যুবক খোস-পাচড়া, দাঁত সুরক্ষার ওষুধ ও বিভিন্ন প্রসাধনী বিক্রি করেন। তিনি জাগাে নিউজকে বলেন, আমি পাশে থাকাতে আলতাফ চাচার কিছুটা উপকার করতে পারি। ঝড়-বৃষ্টি আসলে পাখাগুলো গুছিয়ে দিই, বৃদ্ধ মানুষ, অনেক সময় নিরাপদ স্থানে যেতে যেতে বৃষ্টিতে ভিজে যান। বৃষ্টি থেমে গেলে ভেজা কাপড়ে আবার ব্রিজের ওপর আসেন পাখা বিক্রি করতে।  আতাউর আরো জানান, তিনি দাঁতের চিকিৎসায় ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন। বাজারে একটি দোকানের সন্ধানে আছেন। ভালো দোকান পেলে দ্রুতই সেখানে চলে যাবেন। তখন চাচার টাকা গণনা, পাখা গোছানো, ঝড় বৃষ্টির সময় দ্রুত সরে পড়তে কে সাহায্য করবে জানি না। আতাউর সমাজের বিত্তবানদের কাছে অন্ধ আলতাপ চাচাকে ব্রিজের পাশের খালি জায়গায় একটি টঙ দোকান করে দেওয়ার আহ্বান জানান। একটি টঙ দোকান হলে পাখার পাশাপাশি অন্য কিছুও বিক্রি করতে পারবেন তিনি। এছাড়া চাচা নিরাপদে নিশ্চিন্ত থাকতে পারতেন। সেক্ষেত্রে চাচাকে ছেড়ে গেলেও কষ্ট পেতাম না। চাচা অনিরাপদ আশ্রয়ে কষ্ট পাবেন।    এমজেড/এমএস

Advertisement