জাতীয়

মেহেদীর তিন বছরে ৮৫ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি

মেহেদী হাসান। বাড়ি সাভারের রাজাসন, লালটেক। লেখাপড়া শেষ করে একসময় বেকার ঘুরে বেড়াতেন। বাবার ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলেও তিনি কখনো ব্যবসায় বসতেন না। বাববার বলার পরও তার কাছে সেসব ব্যবসা ভালো লাগত না। তার ইচ্ছা বাবার সাজানো ব্যবসায় না বসে নিজে কিছু করা। নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন তিনি।

Advertisement

মেহেদী বাবার কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে মাশরুম চাষের ব্যবসা শুরু করে তিন বছরে ৮৫ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করেছেন। এখন তিনি একজন সফল মাশরুম ব্যবসায়ী। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘তন্দ্রা মাশরুম ফার্ম’।

সম্প্রতি কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিন বছর আগে আমার ছোট বোন তন্দ্রা তার বান্ধবীর সঙ্গে সাভার মাশরুম সেন্টার থেকে তিনদিনের একটি ট্রেনিং নিয়ে ছোট আকারে মাশরুম চাষ শুরু করে। আমি দেখলাম ছোট বোন প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকার মাশরুম বিক্রি করছে। তখন আমি ভাবলাম এটাকে যদি বড় আকারে করা যায় তাহলে ভালোই হবে। ব্যবসায়ী বাবার কাছে টাকা চাইলাম মাশরুমের ব্যবসা করার জন্য। বাবা টাকা দিতে নারাজ। টাকা চাওয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত বাবা-ছেলের মধ্যে কথা বন্ধ।’

মেহেদী বলেন, ‘কয়েক দিন এভাবে চলার পর একদিন বাবা টাকা দিতে রাজি হলেন। প্রথমে তিনি তিন লাখ টাকা দিলেন। পরে আরও ৫০ হাজার। টাকা হাতে পেয়েই ব্যবসার কাজ শুরু করলাম। এক বছর চলে যাওয়ার পরই মাশরুম ব্যবসায় লাভের পরিমাণ দেখে বাবা আমার ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করলেন। বাবা আমাকে বললেন, “এত নগদ টাকা এই বয়সে তোমার হাতে নিরাপদ নয়। তুমি নষ্ট হয়ে যেতে পার।” বাবা সবসময়ই আমাকে খুব হিসাব করে টাকা দিতেন। এখনো তাই করেন। আমি কিছু বলি না এই ভেবে যে, বাবা যদি এক টাকাও ডিপোজিট করে তাহলে সেটা তো আমারই থাকবে। কারণ আমি বাবার একমাত্র ছেলে।

Advertisement

সাভারের সন্তান মেহেদী বলেন, ‘এখন আমি মাশরুম ব্যবসা, মেসার্স তন্দ্রা ডোর অ্যান্ড ফার্নিচার ব্যবসাসহ বাবার অন্যান্য ব্যবসাও দেখাশোনা করি। মাশরুম ব্যবসা শুরু করলেই যে হবে এমন কথা নয়। যাদের চালান কম তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এটাকে মূল ব্যবসা না ধরে সাইট ব্যবসা ধরলে ভালো করা যাবে। এ ব্যবসায় ঝুঁকিও রয়েছে।’

‘আমি তিন বছর ধরে মাশরুমের প্রতিটি কাজ নিজে হাতে করছি। তারপরও ভুল হয়। একটি মাশরুমের প্যাকেট চাষ উপযোগী করে চাষঘরে নিতে ৩০-৩৬ বার হাত দিতে হয়। এর মধ্যে কোথায় কোন ভুল হয় সেটা শনাক্ত করাও খুব কঠিন। কোনো একটা ভুলের কারণে একবার আমাকে ৭০ হাজার চারা ফেলে দিতে হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মেহেদী বলেন, ‘ঝুঁকি সামাল দেয়া, চারা ফেলে দেয়া, চারায় ভাইরাস আক্রমণ-এসব মোকাবেলা করেই মাশরুমের ব্যবসা অব্যাহত রেখেছি। গত তিন বছরে মোট ৮৫ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করেছি। মাশরুম বিক্রির টাকা দিয়েই এ ফার্মে এসি এবং অন্যান্য মেশিনারিজ ক্রয় করে ফার্মটি বড় করেছি। সব মিলে মাশরুম চাষ লাভজনক বলে আমি মনে করি।’ সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ড. নিরদ চন্দ্র সরকার মাশরুম চাষ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে কোনো কৃষক যদি ১০০ টন মাশরুম উৎপাদন করেন তারপরও তার মাশরুম অবিক্রীত থাকবে না। মাশরুম এখন এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগের চেয়ে বর্তমানে মাশরুমের বাজার অনেক বিস্তৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মাশরুম চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মাশরুম চাষ।’

Advertisement

নিরদ চন্দ্র সরকার বলেন, মাশরুম উৎপাদনের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি বা মেশিনারিজ আগে ব্যবহার হতো তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বর্তমানে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিছু যন্ত্র বা মেশিনারিজ তৈরি করা হয়েছে, যা সাধারণ যে কোনো কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। যেমন- ‘টেরিলাইজেশন কাম ইনকুলেশন চেম্বার’। এটার দ্বারা মাশরুমের প্যাকেটকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। নিজেদের উদ্ভাবিত এ যন্ত্রটি মাত্র ৯ হাজার টাকায় কৃষক ক্রয় করতে পারছেন।

তিনি বলেন, বিদেশে তৈরি এমন যন্ত্র লাখ টাকার ওপর দাম। সব মিলে মাশরুম চাষে এখন আগের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে। এটা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। কোনো বেকার যুবক যদি কিছু করতে চান তাহলে এ ব্যবসার মাধ্যমে জীবন গড়তে পারেন।

এফএইচএস/এসআর/এমকেএইচ