বিশেষ প্রতিবেদন

উপজেলায় এমপিদের ‘তোপের মুখে’ নৌকা

পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের (এমপি) তোপের মুখে পড়েছে দলীয় প্রতীক নৌকা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উপজেলায় নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া প্রার্থী সংসদ সদস্যদের অপছন্দই এ তোপের কারণ বলে অভিযোগ প্রার্থীদের।

Advertisement

নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল থেকে জানা গেছে, ৮৭টি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা করে ৬৯টিতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় গত ১০ মার্চ। আদালতের আদেশে চারটি এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তিনটি উপজেলায় ভোট স্থগিত হয়। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ১১টি উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। দুটি উপজেলায় ফল ঘোষণা করা হয়নি। ৭৮টি উপজেলার মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ ৫৫টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীতরা জয় লাভ করে। ১২ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও ১১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র হিসেবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। এ নির্দেশের পরও পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়নি নাটোরের গুরুদাসপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার নৌকার প্রার্থী।

গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গুরুদাসপুর উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের কাছে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম। বাগাতিপাড়া উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুলের আপন ছোট ভাই অহিদুল ইসলাম গোকুলের কাছে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী সেকেন্দার রহমান।

Advertisement

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের পরিস্থিতি না থাকায় ভোটের আগের দিন রাতে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

জানা গেছে, পূর্বধলা উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম সুজনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে নামেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের একান্ত অনুসারী মাসুদ আলম টিপু।

গত ৭ মার্চ সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা) আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের জয়া সেন গুপ্তা, হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই) আসনের মো. আবু জাহির, কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী) আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের এম এ মতিন ও লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা) আসনের মোতাহার হোসেনকে ৮ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকা ত্যাগের জন্য চিঠি দেয়া হয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকায় ফলাফল ঘোষণাও স্থগিত রয়েছে। দিরাই উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মো. মঞ্জুর আলম চৌধুরী জয় লাভ করেছেন। তাহিরপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, ধর্মপাশায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেন জয় লাভ করেছেন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় ভোটের একদিন আগে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ আল আজাদ স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়জ্জেম হোসেন রতন বলয়ের অনুসারী। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করীম শামীম স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য বলয় বিরোধী হিসেবে পরিচিত। হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতাচ্ছিরুল ইসলাম ও লাখাই উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুশফিউল আলম আজাদ জয় লাভ করেছেন। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেছেন মো. মশিউর রহমান মামুন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আমরা বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে সাময়িক কিছু সমস্যা সৃষ্টি হলেও নির্বাচনের পরে এসব বিরোধ মিটে যাবে বলে আমি আশা করি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে। আমাদের দল থেকে যোগ্য প্রার্থী দেয়া হয়েছে। আমাদের উচিত যারা দলকে বিশ্বাস করে, দলকে ভালোবাসে, দলের আদর্শ ও গঠনতন্ত্র মানে তাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া। বিরোধী দল না থাকায় এ সুযোগটা তারা নিচ্ছে। আমাদের দলীয় হাইকমান্ড এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। বর্তমান পরিস্থিতি, পরিবেশ মিলিয়েই আমাদের নেত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, পঞ্চম ধাপের মধ্যে গত ১০ মার্চ প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ১৮, ২৪ ও ৩১ মার্চ। এবং পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ১৮ জুন।

এইউএ/এনডিএস/এমকেএইচ