সামাজিক বনায়ন ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে অতিথি না করায় এবার রেঞ্জ কর্মকর্তাকে পেটালেন এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এসময় রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নির্বাচনের ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের সহায়তায় এলাকা ত্যাগকালে ফিল্মি স্টাইলে গতিরোধ করে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে চায়ের দোকানে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন এ ঘটনা ঘটান। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের হস্তক্ষেপে লাঞ্ছনার শিকার রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম শাহিদুল ইসলাম মুক্তি পান। শনিবার বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ইতোপূর্বে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামকে মারধর এবং সংবাদকর্মী হাফিজুল ইসলামকেও লাঞ্ছিত করেছিলেন। সংরক্ষিত বন ও পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে পরিবেশ অধিদফতর তাকে চার লাখ টাকা জরিমানা করে।স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বাঘখালী রেঞ্জের আওতাধীন কচ্ছপিয়া বন বিটে ২০১৩-২০১৪ সালে সৃজিত ২০ হেক্টর (৫০ একর) সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনে বিট কর্মকর্তা আজমল হোসেন গত ২৩ আগস্ট সভা আহ্বান করেন। সভায় ৯ সদস্যের কমিটির মধ্যে সাতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এছাড়া সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন করে প্রার্থী থাকায় শনিবার নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ সকাল থেকে ইউনিয়নের দোছড়ি উত্তরকুল ফোরকানিয়া মাদরাসার হল রুমে নির্বাচন শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে।বাঘখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম শহিদুল ইসলাম জানান, নির্বাচন চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টায় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন দলবল নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি তাকে (রেঞ্জ কর্মকর্তা) অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে কেন তাকে অতিথি করা হয়নি তা জানতে চান। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ব্যালট বাক্স তুলে নিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন। ছিনতাই হওয়া বাক্সে উপকারভোগী ৭৫ জনের মধ্যে ৬৯ জনের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা ব্যালট ছিল। অবশিষ্ট ছয়টি ভোট বাকি থাকতেই এ ঘটনা ঘটে।রেঞ্জ কর্মকর্তা আরো জানান, ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ার পর প্রায় ৩০ মিনিট তিনি কেন্দ্রে ছিলেন। পরে কয়েকজন উপকারভোগীর সহায়তায় এলাকা থেকে চলে আসছিলেন তিনি। পথিমধ্যে উত্তরকুল এলাকায় পৌঁছলে চেয়ারম্যান তাকে (রেঞ্জ কর্মকর্তাকে) গতিরোধ করে টেনে-হেচড়ে পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে নিয়ে আটকে রাখেন।এসময় চেয়ারম্যান তাকে জানান, এমপি সাহেবের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এলাকা ছাড়া যাবে না। কিছুক্ষণ পর রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন চেয়ারম্যান। এসময় সাইমুম সরওয়ার নিজেই রেঞ্জ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, ফোনে আলাপকালে কমল জানতে চান তিনি (রেঞ্জ কর্মকর্তা) কেন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। পরে কমল তাকে চলে আসতে বললে, রেঞ্জ কর্মকর্তা তাকে দোকানে আটকে রাখার বিষয়টি জানান। পরে অবশ্য চেয়ারম্যান রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেন।রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম শহিদুল ইসলাম আরো অভিযোগ করে জানান, তাকে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন যেসব ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তা মুখে বলাও সম্ভব না। চাকরি জীবনে এভাবে লাঞ্ছনার শিকার হবেন তা কখনো ভাবতে পারেননি তিনি। এ ব্যাপারে তিনি আইনি ব্যবস্থার প্রথম ধাপ হিসেবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এছাড়া এ বিষয়ে লিখিতভাবেও প্রতিবেদন দেবেন।বন বিভাগের এ কর্মকর্তা আরো জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে কচ্ছপিয়া এলাকায় সংরক্ষিত বন ও পাহাড় কেটে জন চলাচলের রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন আমিন চেয়ারম্যান। এ সময় বন বিভাগের বাধার কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি পাহাড় কাটার অভিযোগে ওই সময় তাকে তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর। এরপর থেকে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছ থেকে জরিমানার টাকা ফেরৎ নেয়াসহ পাশাপাশি হত্যাসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন।কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা শাহ-ই-আলম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে বিচার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও লাঞ্ছিত রেঞ্জ কর্মকর্তা চাইলে আইনের আশ্রয়ও নিতে পারেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরকম নির্বাচনে কারো অনুমতির প্রয়োজন হয় না।অভিযুক্ত কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য কিংবা আমাকে না জানিয়ে নির্বাচন করায় বাধা দিয়েছি।সায়ীদ আলমগীর/বিএ
Advertisement