স্বাস্থ্য

দ্রুত কলেরা রোগনির্ণয় পদ্ধতির উদ্ভাবন

বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বে কলেরা রোগ সংক্রমণের শুরুতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তা শকরার লক্ষ্যে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কলকিট নামের একটি ডিপস্টিক তৈরি করেছে।

Advertisement

তিন বছরব্যাপী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত গবেষণা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার শেষে সাশ্রয়ী এই দ্রুত রোগনির্ণয় পরীক্ষা (আরডিটি) এ ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতির সকল চাহিদা ও দিকনির্দেশনা পূরণ করেছে। কলকিট আরডিটি মলে ভিব্রিও কলেরি চিহ্নিত করতে সক্ষম। এটি এমন একটি ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক ডিপস্টিক পরীক্ষা পদ্ধতি যা মলের নমুনাযুক্ত টিউবের মধ্যে ডুবালে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মধ্যে যথাযথ ফলাফল (খালি চোখে দৃশ্যমান রঙিন ব্যান্ড) প্রদর্শন করে।

মঙ্গলবার আইসডিডিআরবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কলকিটের গবেষণাগার ও মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল প্লস নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিজেসে প্রকাশিত হয়েছে।

এতে দেখা যায় যে, মাঠপর্যায়ে ভিব্রিও কলেরি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কলকিটের সংবেদনশীলতা ও নির্দিষ্টতা বিদেশি আরডিটির অনুরূপ। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে মোট ৭,৭২০ জন রোগীর মলের নমুনা পরীক্ষা করা হয় যেখানে দেখা গেছে, কলকিটের সংবেদনশীলতা শতকরা ৭৬ ভাগ ও নির্দিষ্টতা শতকরা ৯০ ভাগ এবং অন্যান্য প্রচলিত আরডিটির ক্ষেত্রে এগুলো ছিল যথাক্রমে শতকরা ৭২ ও ৮৬.৮ ভাগ। কলেরা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট মান হলো গবেষণাগারে মল কালচার পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ, যা নমুনা তৈরি, পরিবহনে বিলম্ব, দক্ষ কর্মী, সময় (২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা) এবং ব্যয়ের (নমুনা প্রতি ৬ থেকে ৮ মার্কিন ডলার) মতো বিষয়ের প্রতি সংবেদনশীল।

Advertisement

জনস্বাস্থ্য খাতের পরিপ্রেক্ষিতে, কলেরার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার জন্য অবিলম্বে রোগনির্ণয় একান্ত অপরিহার্য, কারণ কলেরা জীবাণু খুব দ্রুত ছড়িয়ে অল্পসময়ের মধ্যেই মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে। তাই, জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় অগ্রাধিকার পায় দ্রুততম সময়ে সঠিকভাবে রোগ চিহ্নিত করতে সক্ষম, সাধারণ ও সাশ্রয়ী এবং সহজে সংরক্ষণ করা যায় এমন একটি পদ্ধতি। ডিপস্টিক পরীক্ষা পদ্ধতি তেমনই একটি পদ্ধতি। মহামারী প্রবণ এলাকা ও আশপাশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে দ্রুত রোগের প্রাদুর্ভাব শনাক্তকরণ, রোগের মৌসুমভিত্তিক ব্যাপকতা পর্যবেক্ষণ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে কলেরা জরিপের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহারে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী কলকিট তৈরির কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় যে, এই অঞ্চল থেকেই বিশ্বের সাতটি মহামারীর সবগুলোর বিস্তার ঘটেছে। কলেরা রোগের দ্রুত শনাক্তকরণের ওপর এ রোগের ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে। বর্তমানে কলেরা শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে গবেষণাগারে মলের কালচার পরীক্ষার পাশাপাশি আমদানিকৃত দ্রুত রোগনির্ণয় কিট ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন একটি আরডিটি কলকিট রয়েছে, যা দেশের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করবে এবং ভবিষ্যতে কলেরার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোয় রফতানির সুযোগ তৈরি করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রাচীন এই রোগের মোকাবেলা এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কলেরা প্রতিরোধক উপকরণ, যেমন কলেরা টিকা এবং দ্রুত রোগনির্ণয় করার কিটের মাধ্যমে সম্ভব হবে।

আইসিডিডিআরবি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) যৌথ ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে ইনসেপ্টা কর্তৃক উৎপাদিত কলকিট বাংলাদেশের ২২টি কলেরা জরিপ সাইটে ব্যবহৃত হচ্ছে।

Advertisement

কলেরা একটি অতি প্রাচীন রোগ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মানুষ এ রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যার সিংহভাগ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষ কলেরার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ রোগটির জন্য প্রধানত ভিব্রিও কলেরি নামের একটি জীবাণু দায়ী, ভিব্রিও কলেরির ২০০-রও বেশি সেরোটাইপ রয়েছে। সেরোগ্রুপ 'ও১' এবং 'ও১৩৯' রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু এবং এগুলো মহামারী ও রোগের আঞ্চলিক প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী।

তবে, গত দশকে ভিব্রিও কলেরি 'ও১৩৯'-এর কারণে কোনো মহামারী ঘটেনি, কেবল রোগের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখা গেছে। কলকিট ভিব্রিও কলেরি সেরোগ্রুপ 'ও১' শনাক্তকরণে অত্যন্ত কার্যকর। এটির উৎপাদন আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে; এটির মূল্য প্রায় ৩ মার্কিন ডলার।

এমইউ/বিএ