আইন-আদালত

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে বিকৃতি : নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপানোয় ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় ওই গ্রন্থের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে হাজির হয়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে আদালতে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

শুনানির শুরুতেই আদালত শুভঙ্কর সাহার কাছে জানতে চান বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি কীভাবে ঘটলো? তখন শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বই প্রকাশে একটি টিম দায়িত্বে ছিলেন। বইয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সব বিষয় অন্তর্ভূক্ত আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রিলেটেড বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি না পাওয়ায় বইয়ে বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি দেয়া হয়নি। এ জন্য আমি আদালতের কাছে পুরো টিমের পক্ষে ক্ষমা চাচ্ছি।

আদালত বলেন, আইয়ুব খান, মোনায়েম খানকে বইতে হাইলাইট করলেন অথচ বঙ্গবন্ধুর একটা ছবিও পেলেন না?

Advertisement

শুভঙ্কর সাহা বলেন, বইতে আইয়ুব খানকে স্বৈরাচার হিসেবেই অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি এ সময় দুঃখ প্রকাশ করে আবারও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

তখন আদালতে রিটকারী আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, ক্ষমা চেয়ে ইতিহাস বিকৃতির দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। জাতির ক্ষমা করতে হবে।

পরে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পুরাতন সংখ্যাগুলো কী পর্যায়ে রয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন এফিডেভিট আকারে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলেন।

এরে আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পুরাতন সকল সংখ্যা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই গ্রন্থের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করেন। আদালতে হাজির হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পুরাতন সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপানোর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

Advertisement

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যোবায়ের রহমান। আদালতের নির্দেশ অনুয়ায়ী আজ (মঙ্গলবার) হাজির হন শুভঙ্কর সাহা।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তভুর্ক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে’ বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বইটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দু’টি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দু’টি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়।

গ্রন্থটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন।

এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর গত বছরের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। ...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি -এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘গ্রন্থটিতে তদানিন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খান এর ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন।’

এফএইচ/আরএস/পিআর