নতুন আমানতের তুলনায় দ্বিগুণ হারে ঋণ বিতরণ করছে বেশিকিছু ব্যাংক। মানছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাও। আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করে তারা খালি করছে ব্যাংকের ভল্ট। এতে করে ঝুঁকিতে পড়ছে গ্রাহকদের আমানত।
Advertisement
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের তালিকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২০ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, । এছাড়া চতুর্থ প্রজম্মের পদ্মা ব্যাংক (ফারমার্স ব্যাংক), এনআরবি গ্লোবাল, এনআরবি কমার্শিয়াল, ইউনিয়ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও সীমান্ত ব্যাংক।
জানা গেছে, আমানতের তুলনায় ঋণ প্রবৃদ্ধি অধিকহারে বাড়ার কারণে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) নিয়ে নতুন নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনায় এডিআর কমিয়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকগুলোকে ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলা হয়। যা আগে ছিল সাধারণ ব্যাংকের ৮৫ শতাংশ ও শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের ৯০ শতাংশ। ওই সময় ১৪টি ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমার উপরে ছিল। তারা নির্ধারিত সময়ে এডিআর সমন্বয় করতে পারেনি। ফলে চার দফায় সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সর্বশেষ গত ৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) আগ্রাসী ঋণ ঠেকাতে এডিআর সমন্বয়ের জন্য আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ এডিআর সমন্বয়ের জন্য ব্যাংকগুলো আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে। যা এর আগে ছিল চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত।
Advertisement
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এডিআর সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বার বার সময় বৃদ্ধিকে আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতা মনে করি। কোনো নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বার বার সময় বাড়ানো হলে তার কার্যকারিতা থাকে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত শক্ত অবস্থান নেয়া। তা না হলে এটা পরিপালন হবে না।
তিনি বলেন, বার বার সময় বাড়ানোর কারণে একটি ভুল বার্তা দেয়া হচ্ছে। সবাই ধরে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় বাড়াবেই। এ কারণে যাচাই বাছাই ছাড়াই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। এতে করে সাধারণ মানুষের আমানত ঝুঁকিতে পড়বে মনে করেন সাবেক এ গভর্নর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এডিআর সীমা অতিক্রম করা শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের ৯৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৯৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৯২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, এসআইবিএল ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৯০ দশমিক ৮২ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংকের ৯০ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ৯০ দশমিক ৩২ শতাংশ ।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশি এডিআর পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফার্মার্স)। ব্যাংকটির এডিআর দাঁড়িয়েছে ১১৭ শতাংশে। এর পরই রয়েছে বেসিক ব্যাংকের ১১৩ শতাংশ। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকে ৯৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, এবি ব্যাংকে ৯১ শতাংশ, আইএফআইসিতে ৮৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৮৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, মার্কেন্টাইলে ৮৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৮৬ শতাংশ, এনআরবি গ্লোবালে ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকে ৮৮ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকে ৮৮ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংকে ৮৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) ১০৫ শতাংশ।
Advertisement
এদিকে ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন থেকে এডিআর সংক্রান্ত জারিকৃত এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ঋণ আমানত অনুপাত উল্লিখিত হারের চেয়ে বেশি রয়েছে সেগুলোকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে নির্ধারিত মাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে। এজন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনে দাখিল করতে হবে।
এডিআর কমানোর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সাধারণ ব্যাংকগুলো মোট আমানতের সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো মোট আমানতের ৮৯ শতাংশ ঋণ দিতে পারবে। যাদের প্রদত্ত ঋণ এর চেয়ে বেশি তাদেরকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা নির্দিষ্ট সীমায় নামিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এসআই/এমএমজেড/এমকেএইচ