বিশেষ প্রতিবেদন

নদীর উন্নয়নে রাজধানীর চিত্রই পাল্টে যাবে

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নদী, সমুদ্র, নৌবন্দর উন্নয়ন প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-র। দখল হয়ে যাওয়া নদীর জমি উদ্ধার করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। নদী, নদী বন্দরের উন্নয়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। একান্ত আলোচনায় নানা পরিকল্পনার কথাও জানান এই রাজনীতিক। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে দ্বিতীয়টি।

Advertisement

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : খাস খতিয়ানের জমি ভূমি মালিকদের মাঝে বণ্টনের কথা বলছিলেন আগের পর্বে। এটি তো সম্ভব করেছে প্রশাসন। এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : রাষ্ট্রের মূল জায়গায় দুর্বল থাকলে ডিসি, এসপি বা ভূমি কমিশনের কিছুই করার থাকে না। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয়ভাবে জবর-দখলে সায় দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছেন। খালেদা জিয়ার আমলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে সেই ধারাবাহিকতায়। খালেদা জিয়ার সরকার আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-কর্মী হত্যা করেছে রাষ্ট্রীয় শক্তির ওপর ভর করেই।

Advertisement

একইভাবে নদীর জমি ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দখল করেছে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণেই। আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব দিয়েই নদী-সমুদ্র রক্ষা করছে। শেখ হাসিনা সফল নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বলেই আমরা বিশাল সমুদ্র এলাকা নিজেদের দখলে রাখতে পারছি। আমরা আইনি লড়াই করে সমুদ্র সীমানা রক্ষা করেছি। যদি সমুদ্র সীমানা নিজেদের দখলে রাখতে না পারতাম, তাহলে বাইরের কোনো জাহাজ ভারত বা মিয়ানমারের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশে আসতে পারত না।

জাগো নিউজ : উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে কী দেখতে পাচ্ছেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : দখল দেখে অবাক হয়েছি। বুড়িগঙ্গার চরের মধ্যে ৪৬টি মসজিদ করা হয়েছে। আমরা মুফতিদের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছি। তারা এভাবে নদীর জমি দখল করে মসজিদ বানানোকে নাজায়েজ বলছেন। ধর্মকে ব্যবহার করে নদী দখল করার জন্যই এমনটি করা হয়েছে। নদীর মধ্যে হাসপাতাল করা হয়েছে। আমরা সঠিকভাবে এসব বিষয়ের সমাধান চাইছি। ধর্মকে পুঁজি করে বিশেষ মহল যাতে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, তার জন্য আমরা সজাগ। জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে। তারা কাউন্সিলিং করবে।

জাগো নিউজ : দখলে যারা সহায়তা করলেন, তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি-না?

Advertisement

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমাদের আপাতত টার্গেট হচ্ছে দখলমুক্ত করা। তবে আইনের আওতায় সবকিছুই আসবে বলে আমি মনে করি।

জাগো নিউজ : বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেই বিআইডব্লিউটিআই’র চেয়ারম্যান বদলি হলেন। উচ্ছেদের সঙ্গে তার এই বদলির সম্পর্ক আছে বলে অনেকে মনে করছেন।

আরও পড়ুন > সব শক্তি পায়ে মাড়িয়ে নদী দখলমুক্ত করবই

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : না, তার বদলির সঙ্গে উচ্ছেদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি অত্যন্ত মেধাবী একজন মানুষ। এখানে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার পেশা (নৌ-বাহিনী) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তার মূল কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। তবে বর্তমান যিনি এসেছেন তিনি আরও দায়িত্ববান বলে মনে করছি। তার আগে থেকেই অভিজ্ঞতা আছে। একজনের ওপর নির্ভর করে তো আর সব চলে না। আরও দক্ষ মানুষ আছেন।

জাগো নিউজ : ঢাকার চারটি নদীর পাড় ঘেঁষে পায়ে হাঁটার রাস্তা করা হচ্ছে। এ পরিকল্পনা নিয়ে কী বলবেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : ইতোমধ্যেই ৫০ কিলোমিটার রাস্তা হয়ে গেছে। প্রায় দেড়শ কিলোমিটার পায়ে হাঁটার রাস্তা হবে চারটি নদী ঘিরে। নদীর উন্নয়নে রাজধানীর চিত্রই পাল্টে যাবে। আমরা এখন বর্জ্য অপসারণের জায়গা পাচ্ছি না। মেয়র এ ব্যাপারে সহায়তা করছেন। বর্জ্য অপসারণ করা মাত্রই আমরা কাজ শুরু করে দেব।

জাগো নিউজ : নদী বন্দরের উন্নয়নে কী বলবেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : পায়রা বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির রূপ বদলে দেবে বলে বিশ্বাস করি। মাতারবাড়ি বন্দরও ঠিক তাই। দেশের প্রতিটি নদী বন্দর আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। আধুনিকমানের নৌযান ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের পরিকল্পনা রয়েছে।

নদী-সমুদ্র নিয়ে গবেষণা বাড়ানো হচ্ছে। সমুদ্রের তলদেশের সম্পদ আহরণ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। আর এসবই নদী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত। নদী বন্দরের উন্নয়নই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমাদের ডেল্টা প্ল্যান নদী এবং সমুদ্র ঘিরেই। শত বছর পর বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় থাকবে, তার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাগো নিউজ : যেসব পরিকল্পনার কথা বললেন, তার জন্য নদীর নাব্যতা ফিরে আনা জরুরি। নাব্যতা ফিরে আনার পরিকল্পনা কী?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা দশ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করতে চাই। আমাদের নৌপথ ব্যবহার করে কলকাতার মানুষ আসামে যেতে পারবে। কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে আমরা ভুটান, চায়না এবং ভারতের সঙ্গে যুক্ত হব। আর নৌপথের সঙ্গে নদী বন্দরগুলোকেও যুক্ত করা হবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে। আমরা ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরে আনব।

জাগো নিউজ : উজানে নদীর পানি অপসারণ করছে ভারত। শুধু ড্রেজিংয়ে নাব্যতা ফিরবে?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা পদ্মার পানি আদায় করেছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। অন্যরা কিন্তু পারেনি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই আমরা পানি বণ্টন চাইছি। তিস্তা নিয়েও আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। ভারতের কিছু আঞ্চলিক সমস্যার কারণে তিস্তা নিয়ে জটিলতা। তবে খুব দ্রুততম সময়ে এই জটিলতা কেটে যাবে।

আমরা পানির সমস্যা দেখছি না। খুব কাছেই আমাদের সমুদ্র। সমুদ্রই আমাদের পানির আঁধার। রাজনৈতিক টার্মের কারণেই সমস্যা দেখানো হয়। পানির দাবিতে মওলানা ভাসানী যতদিন আগে লংমার্চ করেছেন, সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ আজ মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার কথা। তা কিন্তু হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই অনেক সময় পানির সমস্যা বড় করে দেখা হয়।

জাগো নিউজ : গুরুত্ব পাচ্ছে ‘ব্লু ইকোনমি’। বঙ্গোপসাগরে ভারত নাকি চীন গুরুত্ব পাবে?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমাদের কারও সঙ্গেই বৈরিতা নেই। সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব রয়েছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারত আমাদের প্রথম বন্ধু। ভারতের সঙ্গে চীন অথবা চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের কী সম্পর্ক সেটা তাদের বিষয়। আমরা সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের উন্নয়নের স্বার্থে যারা আসবেন তাদেরকেই সাধুবাদ জানাব।

এএসএস/এমআরএম/জেআইএম