‘উৎপাদন খরচ কমার পরও বাংলাদেশে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এ মূল্য গণবিরোধী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মূল্যের পার্থক্য অনেক বেশি। সিলেটের রিকাবি বাজারে, কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে শনিবার বিকেলে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের ১২৭তম পর্বে বাংলাদেশে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত বলে আপনারা মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগ প্যানেল আলোচক এ মন্তব্য করেন।আলোচকরা আরো বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহারকারীরা কিন্তু একেবারেই সাধারণ মানুষ। তাই তাদের জন্য এ মূল্য বাড়ানো অযৌক্তিক। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতি পরিবর্তন না করা গেলে খুবই অসুবিধা হবে। সরাসরি দাম না বাড়িয়ে সিস্টেম লস বন্ধ করা এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা গেলে বেশি ভালো হবে।অনুষ্ঠানে প্যানেল সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম হোসেইন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উলাহ শহিদুল ইসলাম এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. মুনতাহা রকিব। অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন।অনুষ্ঠানের প্রথম প্রশ্ন ছিলো, উৎপাদন খরচ কমার পরও বাংলাদেশে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত বলে আপনারা মনে করেন?উত্তরে অ্যাডভোকেট এমাদ ল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এ মূল্য গণবিরোধী। প্বার্শবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে এ মূল্যের পার্থক্য অনেক বেশি। বিদ্যুতের ব্যবহারকারীরা কিন্তু একেবারেই সাধারণ মানুষ। তাই তাদের জন্য এ বাড়ানো অযৌক্তিক।ড. মুনতাহা রকিব বলেন, এসব প্রভাব পড়বে সুদূরপ্রসারী। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতি পরিবর্তন না করা গেলে খুবই অসুবিধা হবে। সরাসরি দাম না বাড়িয়ে সিস্টেম লস বন্ধ করা এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা গেলে বেশি ভালো হবে।নাসিম হোসেইন বলেন, এর আগে বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এবার তো বিশ্ব বাজারে মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এ সরকার আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করছে।অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকার এর মাধ্যমে কোনো লাভ করছে না বরং ভর্তুকি কমিয়ে ক্ষতি কমাচ্ছে। বিদ্যুৎ আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি না, বিদেশ থেকে আনতে হবে। তার প্রভাব পড়বে কতটুকু তা অর্থনীতিবিদরা বিচার করবেন।অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো, লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া মানুষদের মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন। আমরা দেখছি বাংলাদেশের শতশত মানুষ অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। তারপরও মানুষ কেন এত ঝুঁকি নিচ্ছেন?উত্তরে নাসিম হোসেইন বলেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং কর্মসংস্থান ঠিক থাকলে যুবকরা দেশ ছেড়ে চলে যেতেন না।অনুষ্ঠানের তৃতীয় প্রশ্ন ছিলো, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন যে তার দলকে নেতৃত্ব শূন্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন কোন তৎপরতা কি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন?উত্তরে, নাসিম হোসেইন বলেন, সংবিধানের মূল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে সরকার। বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে সরকার।এম এ মান্নান বলেন, সরকার নয় আওয়ামীলীগ দল বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে। বিএনপির সহিংসতা প্রতিরোধ করছে তারা। আর সেই খেলায় বিএনপি হেরে গেছে।এমাদ উলাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, শুধু বিএনপির নয়, সাধারণ মানুষেরও মত প্রকাশের অধিকার খর্ব হচ্ছে। সরকারের এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।মুনতাহা রকিব বলেন, একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা উচিত।চতুর্থ প্রশ্ন ছিলো- বাংলা ভাষা ব্যতিত বাংলাদেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ভাষা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এসব ভাষা টিকিয়ে রাখার জন্য কী করা প্রয়োজন?মুনতাহা রকিব বলেন, বিশ্বায়নের প্রভাব এখানে একটি বিষয়। যে কোন সম্প্রদায়ের ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সে সম্প্রদায় এবং সরকারের সবার সচেতন থাকা উচিত।নাসিম হোসেইন বলেন, অঞ্চলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত ঐ ভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।এম এ মান্নান বলেন, এটা বাস্তব একটি ধারা। অর্থনৈতিক চাপে, জীবিকার চাপে এই বিলুপ্তি ঘটছে।প্রসঙ্গত, বিবিসি বাংলা এবং বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন যৌথভাবে আয়োজন করে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে দর্শকরা মতামত প্রকাশ এবং প্রশ্ন করতে পারেন উপস্থিত প্যানেল সদস্যদের কাছে। অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন।‘বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ’ অনুষ্ঠানটি বিবিসি বাংলায় প্রচারিত হয় প্রতি রোববার রাত আটটায় এবং পুনঃপ্রচারিত হয় মঙ্গলবার রাত আটটায়। এছাড়া চ্যানেল আইয়ে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় সোমবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটে এবং পুনঃপ্রচারিত হয় প্রতি মঙ্গলবার সকাল ৫টা এবং দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে। ছামির মাহমুদ/এমজেড/এমআরআই
Advertisement