মানবাধিকার কর্মী হারুন আল- রশিদ জানান, ভয়ে দিন-কাটানো এই অবৈধ বাংলাদেশিরা অনেকেই অভিযোগ করছেন দেশটির কথিত এজেন্টদের হাতে প্রতারিত হওয়ায়ই তারা আজ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় বৈধ শ্রমিকের স্বীকৃতি পাননি।
Advertisement
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া সরকার রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু যে তিনটি ভেন্ডর কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দেয়া হয়, তাদের নাম ভাঙিয়ে বেশকিছু নকল এজেন্ট বা দালাল বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
এ মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘আমরা অনেক এমন ঘটনা পেয়েছি, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা না বুঝে ওই ভুয়া এজেন্টদের হাতে চার-পাঁচ হাজার রিঙ্গিত তুলে দিয়েছেন, তাদের আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছে- কিন্তু এজেন্টরা ওই টাকা মেরে দেওয়ায় তাদের আর কখনওই বৈধ হয়ে ওঠা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যেসব ভুয়া কোম্পানি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগেরই মালয়েশিয়ান ও মালয়েশিয়ান নাগরিকদের ছত্রচ্ছায়ায় মালিকানাও ছিল বাংলাদেশিদের।’
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শহরে ইমিগ্রেশন, পুলিশ, রেলা, সিটি কর্পোরেশনের যৌথ অভিযানের কারণে অবৈধ অভিবাসীরা মালয়েশিয়ার ছোট ছোট শহর ও গ্রাম অঞ্চলের লোকালয়ে কাজ করছে- এমন সংবাদ আগেই চলে যায় সংশ্লিষ্টদের কাছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে শত শত অভিবাসীকে আটক করে সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ। জানা গেছে, বহুদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পরও যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, এই ধরপাকড় অভিযান নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ যৌথভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে।
অভিবাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ১০০টি অভিযানে আটক করা হয় ৩২ হাজার ৮৯৫ জনকে। আটকদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ৮ হাজার ৫৫২ জন অবৈধ অভিবাসীকে। এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসী রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪৫ জন মালিককে। তবে অভিযানে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কতজন করে গ্রেফতার করা হয়েছে তা অভিবাসন বিভাগ প্রকাশ করেনি।
আটকদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, নেপাল, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নাগরিকরাও রয়েছেন।
Advertisement
মালয়েশিয়াতে শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা পেনাংয়ে কর্মরত জুয়েল নামে এক বাংলাদেশী যেমন জানান, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের এজেন্ট তার কাছ থেকে চার হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি ৮০ হাজার টাকা) নিয়ে বিনিময়ে শুধু একটি মাই ইজির কাগজ (ভেন্ডর সংস্থা) ধরিয়ে দেয়।
‘তারপর দীর্ঘদিন ঘুরেও আমার ভিসা না হওয়ার কারণে আমাকে এখন দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে ওই এজেন্ট বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করছে।’
মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন শাহ আলম হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘সরকার শ্রম মাইগ্রেশন খরচ সস্তায় সীমাবদ্ধতার মধ্যে আনতে, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে, এবং অভিবাসন সমস্যা এবং পুনর্গঠন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সম্প্রতি কিডনাপের অভিযোগে অভিযুক্ত দুই বাংলাদেশিকে পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় রেশ কাটতে না কাটতেই ইমিগ্রেশনের অভিযানে গ্রেফতার করা হলো ৯ বাংলাদেশিকে। উদ্ধার করা হলো ১ হাজার ১৫০টি পাসপোর্ট, জাল ভিসা।’
অভিবাসন বিভাগের প্রধান জানান, দীর্ঘদিন এই গ্রুপটি মালয়েশিয়ায় জাল পাসপোর্ট ভিসার স্টিকারসহ বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর এতে করেই বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা প্রমাদ গুণছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে। হুমকির মুখে পড়েছে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগের ব্যবস্থা এমনই মত প্রকাশ করলেন বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা।
ইমিগ্রেশনের তথ্য মতে, পাসপোর্ট না থাকা, ভিসা না থাকা, ভিসা নিয়ে অন্যত্র কাজ করা, কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত অপরাধে বাংলাদেশি গ্রেফতার হয়। এসব সাধারণত অন্যের প্ররোচণা, দালাল ও এজেন্টের গাফিলতির কারণে হয়ে থাকে।
অপরদিকে বৈধ করা, ভিসা ও পাসপোর্ট সম্পর্কে নানা চক্রের রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক অপপ্রচার যা বাংলাদেশি প্রবাসীদের হেয় করা হচ্ছে বলে অনেকে মত দিয়েছেন। মাদক পাচার, মাদক ব্যবসা ও মাদক ব্যবহার অপরাধও সম্প্রতি উদঘাটিত হয়েছে যেগুলোতে বাংলাদেশিদের নাম এসেছে।
বাংলাদেশিদের অপরাধের কারণে শ্রমবাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী এই প্রতিবেদককে জানান, মালয়েশিয়া সরকার সব সময় স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ দিলেও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা প্রতারিত হয়ে আসার কারণেই দীর্ঘদিন বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। সেই প্রতারণার ঘটনা মুছতে না মুছতেই কিছু কিছু বাংলাদেশিদের ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপরাধের কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়তে পারে এমন ধারণা অনেকের।
এমআরএম/জেআইএম